শিপ ব্রেকিং ও রিসাইক্লিং শিল্পের সমস্যা

২৫ জুলাই ১৫।।প্রধানমন্ত্রী শিপ ব্রেকিং এন্ড রিসাইক্লিং সেক্টরকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বেসরকারি খাতকে অগ্রাধিকার প্রদান তথা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিপ ব্রেকিং এন্ড রিসাইক্লিং সেক্টর উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। প্রধানমন্ত্রীর এ সকল প্রশংসনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট খাতের একমাত্র জাতীয়ভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এসোসিয়েশন (বিএসবিএ) বিগত ৪০ বছর যাবত শিপ ব্রেকিং এন্ড রিসাইক্লিং সেক্টরকে সমৃদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও এই সেক্টর প্রতি বছর সরকারি কোষাগারে প্রায় ১০০০ কোটি টাকারও অধিক রাজস্ব প্রদান করে থাকে। কিন্তু বর্তমানে শিপ ব্রেকিং ও রিসাইক্লিং শিল্প নানাবিধ সমস্যায় ভুগছে।

বর্তমানে কোন জাহাজ রিসাইক্লিং এর জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় সরাসরি সেইফটি এজেন্সী নিয়োগ করে থাকে। সেহেতু সেইফটি এজেন্সীর সাথে কার্যক্রম ও লেনদেন বিষয়ে সংশ্লিষ্টভাবে ইয়ার্ডের সমঝোতা ও সন্তুষ্টির অভাবে জাহাজ বিভাজন কার্যক্রম বিলম্বিত হয় ও এতে হয়রানি ও বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এর জন্য আমদানিকারকদের স্বস্ব পছন্দ মাফিক মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত থেকে একটি এজেন্সী নিয়োগ দেয়ার বিধান প্রচলন করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এস.এম. রেজাউল মোস্তফা কামাল চট্টগ্রাম সফর করে সেইফটি এজেন্সী সমূহের কার্যকলাপ সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন। সুতরাং ইয়ার্ড মালিকদের পছন্দ অনুযায়ী সেইফটি এজেন্সী নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আবেদন জানিয়েছেন।

শিপ ব্রেকিং এসোসিয়েশনের সদস্যগণ যে সব স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটিংয়ের জন্য আমদানি করে থাকে, তার মধ্যে জেনারেল কার্গো, রেফার ভেসেল, বাল্ক কার্গো, কার ক্যারিয়ার, কন্টেইনার ক্যারিয়ার এই সমস্ত জাহাজ ক্ষতিকারক নয় হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এই সব জাহাজ কোন পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ পরিবহন করে না। কিন্তু এ ধরনের স্ক্র্যাপ জাহাজগুলোতেও ”The ship Breaking and Recyling rules-2011” গেজেটে ক্রমিক নং৭ এর ৭.১ বিধিমালা অনুযায়ী বিস্ফোরক অধিদপ্তর কর্তৃক বহিঃনোঙ্গরে ”Gas free and fit for hot work certificate/sage for man entry” সার্টিফিকেট ইস্যু করার বিধান রাখা হয়েছে। এর পর একই স্ক্র্যাপ জাহাজ বিচিং এর পর জাহাজটি কাটিং এর জন্য অনুরূপ বিস্ফোরক অধিদপ্তর কর্তৃক সার্টিফিকেট ইস্যু করারর জন্য বিধান রাখা হয়েছে। এতে করে বিস্ফোরক অধিদপ্তরকে দুইবার ফি প্রদান করা হচ্ছে। এতে ship recycling sector এর মালিকদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে উপরে বর্ণিত জাহাজগুলোর (জেনারেল কার্গো, রেফার ভেসেল, বাল্ক কার্গো, কার ক্যারিয়ার, কন্টেইনার ক্যারিয়ার) ক্ষেত্রে উক্ত বিধিমালায় ৭ এর ৭.১ বর্ণিত বিস্ফোরক অধিদপ্তর কর্তৃক বহিঃনোঙ্গরে জাহাজ পরিদর্শনের উপরে আরোপিত বিধি শিথিল করা দরকার। এ প্রেক্ষাপটে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক পত্রের মাধ্যমে প্রধান পরিদর্শক বিস্ফোরক অধিদপ্তর ঢাকা কে ”Gas free and fit for hot work certificare/safe for man entry” দুইবারের পরিবর্তে একবার চালু করার বিধান করার জন্য পত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিস্ফোরক অধিদপ্তর এখনো পর্যন্ত কোন প্রকার মতামত প্রদান করেননি। সুতরাং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় সাধন পূর্বক বিষয়টি সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি।

The shipbreaking and recycling rules-2011” গেজেটের ৭ এর ৭.১ এ পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক বহিঃনোঙ্গরে স্ক্র্যাপ জাহাজ পরিদর্শনপূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক তা নিজেরা পরিদর্শন না করে একটি কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটিতে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। উক্ত কমিটির সদস্যবৃন্দের নিকট থেকে প্রতিবেদনের স্বাক্ষরের জন্য তাদের অফিসে এমনকি বাসায় গিয়ে স্বাক্ষর গ্রহণ করতে হয়। সাধারণতঃ শিপ রিসাইক্লেররা শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে কাটিং পারমিশন নিয়ে থাকে। এই বিধান দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত আছে। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের জারীকৃত এক পরিপত্র অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পুনর্বার কাটিং পারমিশন নেয়ার জন্য নির্দেশ দান করেছেন।

এমতাবস্থায় উক্ত কমিটি রহিতকরণ, দুইবার ফি প্রদান, তাদের কাছ থেকে কাটিং পারমিশন না নেয়া ও বিধিমালা থেকে ৭ এর ৭.১ বর্ণিত বহিঃনোঙ্গরে জাহাজ পরিদর্শনের বিধি শিথিল করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৫ এপ্রিল,২০১৫ইং ও ১৪ জুন, ২০১৫ইং পত্রের মাধ্যমে সচিব পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়কে পত্র দেয়া হয়। পত্রে উল্লেখ করা হয় এ পরিপ্রেক্ষিতে উল্লিখিত শিল্পের কার্যক্রম সার্বিক সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তির নিমিত্ত পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার (বিএসবিএ) ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তর/প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে একটি সভা আহ্বান করে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক গঠিত পরিদর্শন কমিটির পরিবর্তে উক্ত প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক জাহাজ বহিঃনোঙ্গরে পরিদর্শনপূর্বক প্রতিবেদন প্রদান এবং উক্ত অধিদপ্তর কর্তৃক জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের বিষয়ে জারিকৃত অন্যান্য পরিপত্র শিথিল/সহজীকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

এই খাতের শিল্পোদ্যাক্তাদের বর্তমানে প্রচলিত বিধান অনুযায়ী সরকারি / বেসরকারি বহু সংস্থা / প্রতিষ্ঠানের কাছে দ্বারস্থ হতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, নেভী, বিস্ফোরক, ড্রাইডক, শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত ৩টি সেইফটি এজেন্সী, সমুদ্র অধিদপ্তর, ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, এসবের কাছে আলাদা আলাদাভাবে দ্বারস্থ হতে হয়। ফলে এই খাতে শিল্পোদ্যোক্তাদের হয়রানীর শিকার অযথা সময় ক্ষেপণ ও ব্যাংক সুদ সহ বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এ ধরনের হয়রানির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের মুম্বাই ও গুজরাট মেরিটাইম বোর্ড এ ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিস প্রচলিত প্রথা রয়েছে। সুতরাং আমাদের দেশেও অধিকতর দ্রুত সেবা প্রদান ও এই শিল্প বিকাশকে ত্বরান্বিত করার জন্য উপরে বর্ণিত সরকারি/বেসরকারি সংস্থা যাতে একত্রে কাজ করতে পারে তার জন্য ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিস প্রচলন করা যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, নেভী কর্তৃক মার্কিং তালিকাটি বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তিগত বিশ্বের প্রেক্ষাপটে আপগ্রেডেশেন করার দরকার রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ মূলতঃ বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজে ব্যবহৃত কমিউনিকেশন এবং নেভিগেশনের যন্ত্রপাতি মার্কিং করে। যা দেশের নিরাপত্তা রক্ষার হুমকী হিসেবে বিবেচিত হয়। আপনি অবগত আছেন যে, বর্তমান বিশ্বে মোবাইলসহ অত্যাধুনিক কমিউনিকেশন প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে জাহাজে ব্যবহৃত কমিউনিকেশন ও নেভিগেশন যন্ত্রপাতিসমূহ নিরাপত্তার জন্য তেমন হুমকী স্বরূপ নয় বিধায় তা মার্কিং তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নেভীর মার্কিং তালিকা আপগ্রেডেশান করা উচিত। তাছাড়া নেভীকে কাঠামো, জনবল, ফান্ড ইত্যাদির জন্য অন্য অরগইনাজেশন এর উপর নির্ভর করতে হয়। তাই ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিসে অন্যান্য সংস্থার সাথে নেভী একত্রে কাজ করলে নির্ভরতা কমে যাবে।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, বিগত ১২১২২০১১ইং তারিখ শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক ”The ship breaking and recycling rules-2011” নামক গেজেট প্রকাশ করা হয়। উক্ত গেজেটে “ওয়ান স্টপ” সার্ভিস প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি সমন্বয়ে Ship breaing and ship recycling  গঠন করার বিধান রয়েছে। শিপ রিসাইক্লিং সেক্টরে বর্তমানে বাজারে প্রবল মন্দাভাব চলছে। অতএব এই সংকটের সময়ে এই সমস্যা সমাধান অত্যাবশ্যক।

সূত্রঃ দৈনিক  আজাদী

 

Sharing is caring!

Related Articles

Back to top button