
করোনা রোগী এবং টোটকা, প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি কিংবা ন্যাচারোপ্যাথি//চারু হক
‘প্রেম কিউর কোভিড পেশেন্টস উইথআউট এনি মেডিসিন্স’। এই প্রেমকে সেই প্রেম ভেবে একেবারেই সাধারণ মনে হইছিল শিরোনামটিকে, এই ব্যাপারটাকে। প্রেমের মতন বিকল্পহীন অনুভব, এত বড় ড্রাইভিং ফোর্স অনেক অসম্ভবকেও সম্ভব করে ফেলতে পারে। কিন্তু শিরোনামের প্রেম সেই প্রেম নয়; তিনি একজন মানুষ- তার নাম প্রেম উপাধ্যায়। ওপার বাংলার জলপাইগুড়ির নয়াবস্তি নামক এলাকায় তার বাড়ি। তিনি ন্যাচারোপ্যাথি বা প্রাকৃতিক চিকিৎসায় বিশ্বাসী ও এই পদ্ধতির চর্চায় রত প্রান্তবাসী এক ব্যক্তি। করোনা আক্রান্ত নিজের মুমূর্ষু মেয়েকে ন্যাচারোপ্যাথির প্রয়োগে সুস্থ করে তোলার মধ্য দিয়ে এই রোগের বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম শুরু হয়েছে।
মূলধারা মিডিয়ার বাইরে প্রকাশিত এক ভিডিওচিত্রে প্রকাশিত তথ্য মারফত জানা গেছে, এযাবৎ দুই শতাধিক করোনাক্রান্ত রোগী তার প্রযুক্ত এ পদ্ধতিতে সুস্থ হয়েছে। এবং এক্ষেত্রে তিনি যে পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে চলেছেন সেটা প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির বাইরে, এমনকি একেবারেই বিপরীতে। তিনি তার চিকিৎসায় কোনও ওষুধ ব্যবহার করেন না, বরং যারা করোনা থেকে রেহাই পেতে এটা সেটা ওষুধ সেবন করছেন তাদেরকে তিনি সেসব থেকে নিবৃত করেন। ওষুধের বদলে বিভিন্ন ফলের রস, হারবাল উপাদান সেবন করতে বলেন।
উপরন্তু তিনি মাস্ক পড়তেও বারণ করেন। কারণ, মাস্কের ছিদ্রের পরিধি করোনা ভাইরাসের সাইজের চাইতে বড় বিধায় এইসব মাস্ক করোনা ঠেকানোর প্রতিরক্ষায় ব্যর্থ। উল্টো মাস্কের দীর্ঘকালীন ব্যবহারে মানুষের মগজে ও দেহে অক্সিজেনসহ সমস্ত দরকারি বায়বীয় উপাদানের ঘাটতি ঘটে। এর ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের স্বাভাবিকতার সংকটে অন্যসব অসুখের সম্ভাবনা বাড়ে। মাস্কের দীর্ঘকালীন ব্যবহার হাইপার ক্যাপনিয়া ও হাইপোক্সিয়াসহ নানাবিধ জটিলতায় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। ভিডিওচিত্রে জানা গেছে, করোনা ঠেকানোর উপায় হিসেবে মাস্কের কার্যকারিতা সম্পর্কে তারা ভারত সরকারের কাছে আরটিআই আইনে সঠিক তথ্য জানতে চেয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু সেটা জানা সম্ভব হয়নি। মাস্কের ব্যবহার নিয়ে এ যাবত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং তাদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ একেক সময় একেক ধরণের নির্দেশনা (৭ বার) দিয়ে গেছে, যা কখনও আগেরটার চাইতে পরেরটা ঠিক বিপরীত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। প্রেম উপাধ্যায় এবং তাঁর এ সংক্রান্ত জ্ঞানের গুরু ডঃ বিশ্বরূপ রায়চৌধুরী, নিতেশ ঘোষাল প্রমুখের মতে, বাধ্যগত মাস্ক ব্যবহার ও প্রিয়জনের সংস্পর্শ থেকে বিযুক্ত আইসোলেশন এবং সেই সাথে ব্যবহার করা নানান কিসিমের ক্যামিকেল ড্রাগের প্রভাব করোনাক্রান্ত মানুষকে মুমূর্ষু করে ফেলে, কাউকে কাউকে মেরেই ফেলে।
এসবের বিপরীতে, অর্থাৎ মাস্ক ও আইসোলেশনের বিপরীতে ভালোবাসা ও সহানুভূতির যোগানই মানুষকে সুস্থ করে তুলতে পারে। এ লক্ষে ওষুধ হিসেবে প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা পদ্ধতি বা ন্যাচারাল ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে হবে, ওষুধ হিসেবে প্রকৃতির দান প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। অচ্ছুৎ টোটকা নামে অভিহিত এইসব সহজসরল পদ্ধতির প্রয়োগেই করোনাক্রান্ত মানুষজন সুস্থ হয়ে যাচ্ছে প্রেম উপাধ্যায়ের কাছে এসে। দাবিমতে, এভাবে সুস্থ হওয়া রোগীদের মধ্যে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির ডাক্তার ও বড়সড় সরকারি অফিসাররাও আছে। প্রমাণ হিসেবে তাদের ট্রিটিমেন্ট গ্রহণের নথিপত্র রেখে দেয়া হয়েছে বলা হচ্ছে। অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই এক টিভি সাংবাদিক তাকে সরকারের উল্টোপথে হাঁটার পরিণতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানিয়েছেন, মানুষকে বাঁচাতে তাকে যদি মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয়- তা তিনি মেনে নেবেন। কারণ, ভালো কাজের জন্য মৃত্যুবরণও মর্যাদার ব্যাপার।
এছাড়া তিনি বা তাঁর মতো ন্যচারোপ্যাথির প্রাকটিস করা ব্যক্তিরা যেহেতু কোনও ওষুধ দেন না, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনকানুন দিয়েও তাদেরকে অপরাধী সাব্যস্ত করা যাবে না। তারা স্রেফ রোগীর শারীরিক অবস্থা সাপেক্ষে প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গের প্রয়োগ করেন, ফলমূল ও হারবাল উপাদান সেবন করতে বলেন। ১০৪-১০৫ ডিগ্রি জ্বরে কোনও ধরণের পারাসিটামল প্রয়োগ না করেই তারা মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে জ্বরকে ৯৬ ডিগ্রিতে নামিয়ে আনতে পারেন। এমনকি প্রচলিত চিকিৎসা ৮০% ফুসফুস ড্যামেজড যে রোগীকে দুদিনের আয়ুসীমা বেধে দিয়েছে, সেই রোগীকে তারা মাত্র ৬ দিনের মাথায় তারা সুস্থ করে তুলেছেন। সেই রোগী এখন দিব্যি সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। টিভি সাংবাদিকের সম্মুখে প্রেম উপাধ্যায়কে এরকম দাবি করতে এবং এ বিষয়ে তাঁর দেয়া তথ্যকে চ্যালেঞ্জ করার আহবান জানাতে দেখা গেছে।
ট্রিলিয়ন ডলার হেলথ ইন্ডাস্ট্রির হাসপাতাল, ডাক্তার, ফার্মাসিউটিক্যাল ও রেভিনিউ বোর্ডসহ অজস্র রকমের স্টেকহোল্ডারের স্বার্থের বিরুদ্ধে এই যে জিরো মেডিসিন ও জিরো মানি ইনভেস্টমেন্টে টোটকা নামক ন্যাচারোপ্যাথির প্রয়োগে জিরো মর্টালিটির দাবি করা হচ্ছে – এটাকে অনায়াসে আরেকটি কন্সপাইরেসি দাবি করা যেতেই পারে।
লেখক: চারু হক