
আজ ‘বিশ্ব বাঘ দিবস’। গতকাল ছিল ‘বিশ্ব পরিবেশ সংরক্ষণ দিবস’।
আজ ‘বিশ্ব বাঘ দিবস’। গতকাল ছিল ‘বিশ্ব পরিবেশ সংরক্ষণ দিবস’।
কি যে যন্ত্রণা! কি দরকার এগুলার? খালি কয় পাহাড়, বন, বন্যপ্রাণী, নদী, হাওড়-বাওড়-বিল সংরক্ষণ করতে হবে। এইগুলা কেন রক্ষা করতে হবে? এই যে গতকাল পাহাড় ধসে আর পাহাড়ি ঢলে ১২ জন মানুষ মরে গেল, পাহাড় না থাকলে কি এই ১২ জন মানুষ মারা যেত?
গতকাল পত্রিকা কয় মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলার সংরক্ষিত ক্রান্তীয় চিরসবুজ বন (৫ হাজার ৬৩১ একর) জুড়ে সাফারি পার্ক করা হবে। সুন্দরবন কিনার জুড়ে শিল্পায়ন হচ্ছে বলে কত চিল্লাচিল্লি। বনে কি থাকে গাছ আর কতগুলো জন্তু-জানোয়ার ছাড়া? খালি কয় বাঘ, বাঘ। বাঘ বাঁচাতে অইব। বাঘ দিয়া কি হয়? বাঘ কি খাওয়া যায় না বাঘ দিয়া হালচাষ, কারখানার চাক্কা ঘুরানো যায়? যত্তসব ন্যাকামি।
কেউ কয় উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী ধ্বংস করে, সন্দ্বীপ চ্যানেল ভরাট করে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। সাগর একটা ভয়ংকর জিনিস, খালি খালি তুফান-তাফান দিয়া ভাসায়ে নিয়া যায় সবকিছু, এই দানব যত দূরে থাকে তত ভাল। আর সে দূরে চলে গেলে সবুজ বেষ্টনীর তো দরকার নাই।
ফাইজ তাইয়েব ভাই আবার কয় মেঘনা-ফুলদী নদীর বুক কর্পোরেটরা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিচ্ছেন। ঠিকই তো আছে। এই নদী কত ক্ষতি করে দেখেন তো? – নদীর পানি বেড়ে বন্যা হয়, মানুষের ঘর-বাড়ি, ফসল ডুবে যায়, যোগাযোগ ঠিক রাখার জন্য ধার-দেনা করে ব্রীজ বানাতে হয়, বন্ধু রাষ্ট্রের লগে নদীর পানি, নদীর পানি করে সম্পর্ক খারাপ হয়। আমরা এখন মাছ চাষ করতে জানি। এত লম্বা লম্বা নদীর কোন দরকার নাই। কতগুলা পুকুর বানাইলেই মাছ চাষ করা যায়।
বরং পাহাড় কেটে নদীভরাট করলে কতটা জমি বাড়বে! কত রাস্তা, ঘরবাড়ি, শিল্পকারখানাসহ বিশাল বিশাল অবকাঠামো বানানো যাবে? সুন্দরবনে শিল্পায়ন করলে বন আলোকিত হলে বাঘ-কুমিরসহ হিংস্র পশুর দল চলে যাবে। মানুষের আর কোন ভয় থাকবে না। এত এত জায়গা বাড়লে আমরা কত লক্ষ লক্ষ গাছ লাগাতে পারব? কত হাজার গবাদি পশুর খামার করতে পারব! কি হবে বন দিয়া, বাঘ-কুমির দিয়া?
এত এত উন্নয়ন হবে, এত এত মুনাফা হবে। শুধু তোমাদের জন্যেই তো হবে। তারপরও এই জাত কিচ্ছু বুঝে না। হুদাই খালি চিল্লাচিল্লি, হুদাই খালি কাউকাউ করে – এটা সংরক্ষণ করতে হবে, ওটা সংরক্ষণ করতে হবে। আরে নিজের সুবিধা পাগলেও বুঝে, খালি এই জাত বুঝল না।
আসেন, এইসব দিবসটিবস মুইছা ফালাই। পাহাড়, নদী, হাওড়-বাওড়-বিল, বন-জঙ্গল সব পরিষ্কার করে সমান করে বেশী বেশী গাছ লাগা্ই, মাছ চাষ করি, গবাদি পশুর খামার আর শিল্পকারখানা গড়ি। – পরিবেশ রক্ষা করি, গরু-ছাগল-মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ হই, দু’হাতে মুনাফা লুটি-পাচার করি, সর্বাঙ্গে উন্নয়ন করি।
লেখক: সাদিয়া জেরিণ পিয়া, গবেষক-পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা