প্রাণ প্রকৃতি রক্ষা মঞ্চের সমাবেশ

সিআরবি বাঁচাও

‘প্রবল জনমত,সিডিএর মাস্টার প্ল্যান ও ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান – এ সিআরবি সংরক্ষণের জোর সুপারিশ,শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান ও স্মৃতিস্তম্ভ,সংবিধানের বাধ্যবাধকতা সবকিছু পায়ে মাড়িয়ে কিসের শক্তিতে সিআরবিতে বানিজ্যিক হাসপাতাল করতে কর্তৃপক্ষ মরিয়া হয়ে উঠেছে,তা চট্টগ্রামবাসী জানতে চায়।আজ যারা সিআরবিতে প্রাইভেট হাসপাতাল করার পক্ষে সাফাই গাইছেন,,তারা জনগণের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবেন।ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষের সাথে রেলের চুক্তি বাতিল ও প্রকল্প বন্ধের লিখিত ঘোষণা ছাড়া সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলন থেকে চট্টগ্রামবাসী পিছু হটবেনা।“
‘প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে সিআরবিতে হাসপাতাল ও কোন স্থাপনা নির্মাণ চলবেনা’-এ প্রাণ প্রকৃতি রক্ষা মঞ্চের বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন।প্রাণ প্রকৃতি রক্ষা মঞ্চের উদ্যেগে আজ বিকাল ৫ টায় সিআরবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও সিআরবি এলাকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি ও স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচী পালিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট গবেষক ও চিকিৎসক ইমরান বিন ইউনুস,মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইউনুস,মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেন,গণসংহতি আন্দোলন জেলা সমন্বয়কারী ও নববর্ষ উদযাপন কমিটির সেক্রেটারি হাসান মারুফ রুমি,বাসদ(মার্কসবাদী) জেলা সদস্যসচিব শফিউদ্দিন কবির আবিদ,বাসদ জেলা ইনচার্জ আল কাদেরি জয়। সমাবেশ পরিচালনা করেন বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি আসমা আক্তার।
ডাঃ মাহফুজুর রহমান বলেন,”উক্ত প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত এলাকায় চাকসুর সাবেক জিএস বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রব,নজির আহমেদের কবরসহ ১০ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ আছে।মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে এখানে কোন স্থাপনা নির্মাণ চলবেনা।তিনি সিআরবি রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ গঠন করে চুক্তি বাতিল না করা পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট চালানোর আহবান জানান।
ডাঃ ইমরান বিন ইউনুস বলেন,চট্টগ্রামকে বাসযোগ্য ও পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে তুলতে ১৯৯৫ সালে জাতিসংঘের সহায়তায় সিডিএর মাস্টার প্ল্যানে সিআরবি এলাকাকে “স্ট্রেটেজিক ওপেন স্পেস” হিসেবে চিহ্নিত করে। মাস্টার প্ল্যানের আলোকে সিডিএ “ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান(ড্যাপ)” প্রণয়ন করে। ২০০৯ সালে যা প্রজ্ঞাপন জারি হয়। ড্যাপ – এ সিআরবি-কে “সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য” হিসেবে সংরক্ষণের কথা বলা আছে।প্রজ্ঞাপন জারির পরও ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানকে বিবেচনায় না নিয়ে ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষের সাথে রেলের এ চুক্তি শুধু আইনগতভাবে অবৈধ তাই নয়,ঘোরতর অপরাধ।তিনি সিডিএর ড্যাপ অনুযায়ী টাইগারপাস থেকে সিআরবি,লালখানবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করার আহবান জানান।
বক্তারা আরো বলেন,সংবিানের ১৮ ধারায় প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ২৪ ধারায় বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমন্ডিত স্মৃতিনিদর্শন, বস্তু বা স্থান-সমূহকে বিকৃতি বা অপসারণ হতে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।ফলে ইউনাইটেডের সাথে রেলের এ চুক্তি সম্পূর্ণ সংবিধানবিরোধী।
‘উন্নয়ন’ প্রকল্প ও বাণিজ্যিক প্রকল্পের গ্রাসে ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম শহরে সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত স্থান,পার্ক,খেলার মাঠ ধ্বংস এবং সংকুচিত করা হয়েছে।নাগরিকদের নির্মল বাতাসে শ্বাস নেওয়া,সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড,সুস্থ বিনোদনের জন্য অবশিষ্ট সিআরবি এলাকাও আজ মুনাফার লালসায় ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে।এর বিরুদ্ধে আজ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে।আবেদন নিবেদন নয়,একমাত্র দৃঢ় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পথেই আজ এ চক্রান্ত প্রতিহত করা যাবে,আমরা নগরবাসীকে তার উদাত্ত আহবান জানাই।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বেইউনাইটেড কর্তৃপক্ষের সাথে রেল কর্তৃপক্ষের সম্পাদিত জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল সিআরবিকে হেরিটেজ ও রিজার্ভ এলাকা হিসেবে সংরক্ষণের জোর দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে ডাঃ মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে মিছিল সহকারে সিআরবি ভবনের সামনে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ,শহীদ আবদুর রব ও নজির আহমেদের কবর ও উক্ত এলাকায় এলাকাবাসীর গড়া ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়।

Sharing is caring!

Related Articles

Back to top button