পরিবেশ রক্ষায় আমাদের বৃক্ষরোপণ উদ্যোগ কতটুকু পরিকল্পিত?

সভ্যতার দ্রুত ক্রমবিকাশ ঘটছে, বাড়ছে নগরায়ন এই নগরায়নের জন্য বিরান হচ্ছে বনভূমি এছাড়া রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকৃতি ঘাতক আচরণ। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে বিশ্বজুড়ে বৃক্ষরোপণে হাজার হাজার উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় আসলেই কি এতে প্রকৃতির কোনো লাভ হচ্ছে?

অস্ট্রেলিয়ার সানশাইন কোস্ট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলছেন বৃক্ষরোপনের প্রথম শর্ত হচ্ছে তার উদ্দেশ্য ঠিক করা বর্তমান পরিস্থিতিতে যে বৃক্ষরোপণ হচ্ছে তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যহীনভাবে। আর সে কারণেই বিপদ বাড়ছে বৈ কমছে না। অধ্যাপক রবিন চ্যাডন বলছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির জন্য বেছে নেওয়া হয় নির্দিষ্ট কোন প্রজাতির গাছের চারা, সমগ্র অঞ্চলজুড়ে সেই বিশেষ প্রজাতির চারা ই  রোপন করা হয়। তাতে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ঠিকই কিন্তু নষ্ট হয় প্রকৃতির ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য।

অস্ট্রেলিয়া সহ আরো অনেক দেশে এই পদ্ধতিতে কৃত্রিম বনভূমি তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু তাতে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি বিরান হওয়া বনের পরিধি বাড়লেও বন্যপ্রাণীদের জন্য সম্পূর্ণ আবাস যোগ্য হয়নি‌।

পৃথক পৃথক প্রজাতির পশুপাখি কীটপতঙ্গ বসবাসের জন্য বেছে নেয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ সেভাবে গড়ে উঠেছে আমাদের বাস্তুতন্ত্র, কিন্তু সেই সুযোগটিই বন্ধ করে দিচ্ছে মনোকালচার। এছাড়া কোন একটি পরিবেশে বিশেষ কোন প্রজাতির গাছের উপস্থিতি কমিয়ে দিতে পারে মাটির গুণগত মান বাতাসে জলীয়বাষ্পের মাত্রা। রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেনের গবেষক ক্যাট হাউউনক প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিবছর গোটা বিশ্ব জুড়ে কোটি কোটি বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আদৌ কি হিসেব রাখা হয়  শেষ পর্যন্ত জীবিত রয়েছে কয়টি গাছ? না, সে খবর নেওয়া হয় না যার ফলে অধিকাংশ চারাই মারা যায় অপরিণত অবস্থায়। বন সংরক্ষণের উদ্যোগী হয়ে গত বছরে শ্রীলঙ্কাতে এক হাজার হেক্টর অঞ্চলজুড়ে প্রায় দেড় কোটি ম্যানগ্রোভ চারা লাগিয়েছিল শ্রীলঙ্কান সরকার, তবে পরিচর্যা ও পরিকল্পনার অভাবে  ৮০ শতাংশ চারার মৃত্যু হয়। মেক্সিকো ও চিলিতে দেখা গেছে অতিরিক্ত বৃক্ষরোপণ কার্বন শোষণের বদলে কার্বন এর মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে গবেষকরা বলছেন বৃক্ষরোপণ বন্ধ নয় কার্বন এর মাত্রা জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমিক্ষয় ইত্যাদি পরিবেশ জনিত সমস্যায় বৃক্ষরোপণ ই একমাত্র সমাধান। তবে তা যেন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং নিয়ম মেনে হয়।

গবেষকরা জোর দিচ্ছেন বনভূমি সংরক্ষণের উপর, বনভূমি সংরক্ষণের অর্থ হল কোন অঞ্চলে স্বাভাবিকভাবে যে প্রজাতির গাছের অস্তিত্ব রয়েছে সেই ধরনের গাছ রোপন তাতে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকবে এবং জীববৈচিত্র্যের কোন সমস্যা হবে না। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বৃক্ষনিধনের কোন বিকল্প নেই বলে তারা মনে করেন।

মিজানুর রহীম চৌধুরী

সূত্র: প্রহর ইন

 

 

 

 

 

Sharing is caring!

Related Articles

Back to top button