
চিকিৎসকদের সম্মিলিত একটা প্রতিবাদ আসুক! ফিরোজ আহমেদ
চিকিৎসকদের সম্মিলিত একটা প্রতিবাদ আসুক!
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স ও হাসপাতালের শুধু না, সারা দেশের হাসপাতালের চিকিৎসার কেনাকাটায় দুর্নীতিতে তো আপামর চিকিৎসকদের প্রায় কারও ভূমিকা নেই, হাসপাতালের পরিচালকরা কেউ কেউ থাকতেও পারেন।
তাহলে চিকিৎসক সমাজের জোরালো প্রতিবাদ আসছে না কেন? সাধারণ মানুষ তো ভুলভাবে ভাববে এই দুর্নীতি তারা করেছেন, অথচ খুবই সম্ভব যে তারা আদৌ এ বিষয়ে জানেনই না।
শুধু এই বদনামই তো না! এই নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে যারই যাবার অভিজ্ঞতা আছে, দেখেছেন মানুষের কী দুর্দশা! মনে হয় অনন্ত মানুষের সারি! আপনাদের কী মনে হয় না এই দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে এই খানে বরং আরও দশ জন, প্রয়োজনে চল্লিশ জন কি একশো জন বেশি চিকিৎসককে আনা যেতো, প্রশিক্ষণ দেয়া যেতো, সম্পদের অপ্রতুলতার প্রশ্নই আসতো না। কে জানে, প্রয়োজনে ৬ টা এমন বড় নিউরো হাসপাতাল হয়তো বানানো যেতো শুধু কোভিদ কালিন দুর্নীতির পয়সা দিয়ে! ভুরুঙ্গামারী বা বামনা উপজেলার রোগীটাকে ঢাকায় আসতে হতো না, বিভাগীয় সদরেই তারা চিকিৎসা পেতেন তখন।
নিউরো হাসপাতালে কয়েকবার আমার যাবার সৌভাগ্য হয়েছে। প্রথমবার আমার আত্মীয়কে এক মিনিটে দেখে একটা ওষুধ দিয়ে বিদায় দেয়া হয়। আমার বন্ধু আরেকজন চিকিৎসক সেই বন্দোবস্ত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তার হাসপাতালের অধ্যাপকের পরামর্শে একটা সিটি স্ক্যান করান, এবং দেখা যায় অধ্যাপকের অনুমান ঠিক, তখনও রোগীর মাথায় রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। ফলে ওষুধ একদম বদলে দিয়ে নতুন ওষুধ দেয়া হয়। অধ্যাপক একটু অস্বস্তি নিয়ে বলেছিলেন, ‘রোগীর চাপ, সময় কম বলে খেয়াল করেনি’…
চিকিৎসকদেরই সামলাতে হয় রোগীদের এই চাপ। রোগীদের সাথে চিকিৎসকদের সম্পর্ক নষ্টের একটা বড় কারণ হাসপাতালগুলো রোগীদের প্রয়োজনীয় রসদ দিতে পারছে না, ‘সম্পদের অভাবে’, পৃথিবীর দুর্নীতিগ্রস্ততম স্বাস্থ্যবিভাগের দেশে। রোগী ভাবেন চিকিৎসক কসাই, চিকিৎসক সময় দেয় না, ওষুধ বাইরে থাকে আনতে হয়। চিকিৎসক ভাবেন তিন ঘন্টায় হাজার রোগী সামলাই, ওষুধের সরবরাহ নাই!
আপনারা দায় না নিন। ব্যক্তিগতভাবে আপনারা প্রতিরোধ করতে না পারুন, অন্তত পেশাগত প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিন এই নিয়ে পরিস্কার কথা বলবার জন্য। কারা কারা কিভাবে জড়িত, কিভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাধ্য করে কোন দামে কি কিনতে, সেগুলো খোলাসা হোক। চিকিৎসকদের কেউ্ যদি জড়িত থাকে, তাকে ছেঁটে ফেলুন, সকলের স্বার্থে একটা দুটো বদমাশকে বিতাড়ন করুন।
শুধু মাস্কের কথিত দুর্নীতির অর্থ দিয়ে হয়তো ঢাকা শহরের এক বছরের চিকিৎসাসেবাকে আরও বহুগুন উন্নত করা যেতো। টীকার টাকার দুর্নিতি নিয়ে হয়তো আরও বহুগুন কিছু করা সম্ভব। পেশার মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থেই জনগণের পাশে যতটা সম্ভব দাঁড়ান।
আমার বন্ধু তালিকার চিকিৎসদের কোন প্রতিবাদ বা আগ্রহ বিষয়টা নিয়ে দেখিনি। এমন একটা জরুরি প্রশ্নকে আপনারা এড়িয়ে যাবেন না। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের অনেকগুলো জটিল প্রশ্ন আজকে এক গ্রন্থিতে এসে মিলেছে। উপকূলের বাঁধে কিংবা স্বাস্থ্যে দুর্নীতি– গুণ্ডাতন্ত্র প্রত্যেকের জীবনকেই অসনহীয় করে তুলবে ক্রমাগত।
লেখক: ফিরোজ আহমেদ, প্রাবন্ধিক, রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন