
চট্টগ্রামে বেড়েছে করোনা সংক্রমণ, হাসপাতালে চাপ
চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও বেড়েছে রোগীর চাপ। অনেক হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকায় করোনা রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। কোথাও কোথাও কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে নন-কভিড ইউনিটের সংখ্যা। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে অন্যান্য রোগে সেবা নিতে আসা মানুষ।
এদিকে চট্টগ্রামে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টার চেয়ে পরবর্তী গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা পরীক্ষা এক হাজার ৮১০টি কমলেও শনাক্ত বেড়েছে ১৫.৮৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে এক হাজার ১১৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৮৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৯২৫টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৯০ জনের দেহে। আগের নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ছিল ৯.৯১ শতাংশ, যা সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়ে ২৫.৭৪ শতাংশ হয়েছে। তা ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার করোনা আক্রান্ত হয়ে দুইজন মৃত্যুবরণ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালে আইসিইউ ও এইচডিইউ শয্যা খালি নেই। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর অত্যধিক চাপের কারণে হাসপাতালের নন-কভিডের (সাধারণ রোগী) শয্যা কমিয়ে কভিড রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। তা ছাড়া বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে অঘোষিতভাবে রুটিন (বিভিন্ন রোগের নির্ধারিত) অস্ত্রোপচার (অপারেশন) কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
নগরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে করোনা রোগীর চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি শয্যা রয়েছে পাঁচলাইশে পার্ক ভিউ হাসপাতালে। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রেজাউল করিম গতকাল বিকেলে বলেন, ‘আমাদের এখানে আইসিইউ-এইচডিইউ মিলে ১০টি শয্যা এবং আইসোলেশনে ৫৬টি শয্যার সবগুলোতে এক সপ্তাহ ধরে করোনা রোগী ভর্তি রয়েছে। কোনো শয্যা খালি নেই। প্রতিদিন ১০-১২ জন করে করোনা রোগী ভর্তি হতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেলেই নতুন করোনা রোগী ভর্তি করা হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী খান বলেন, ‘এত দিন আইসিইউর ১০টি এবং আইসোলেশনে ৩০টি শয্যা ছিল। এসব শয্যায় রোগী ভর্তি থাকায় এবং করোনা রোগীর আরো চাপ থাকায় আজ (গতকাল) নন-কভিডের ৯টি শয্যা কমিয়ে সেখানে করোনা রোগীর চিকিৎসাব্যবস্থা করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা রুটিন ওটি বন্ধ করে দিয়েছি। আমাদের মতো আরো অনেক বেসরকারি হাসপাতালেও আপাতত রুটিন ওটি বন্ধ রয়েছে।’
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘রেড ও ইয়েলো জোন মিলে ২০০ শয্যার মধ্যে আজ ১৬০ জন ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে ১০০ শয্যার রেড জোনে (করোনা আক্রান্ত) ৬৫ জন চিকিৎসাধীন আছেন। রোগী ভর্তি আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।’
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী চট্টগ্রামে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪০ হাজার ২৮৩ জন। এর মধ্যে নগরে ৩২ হাজার ৬২ এবং জেলায় আট হাজার ২২১ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৮৮ জন। এর মধ্যে নগরে ২৮৪ এবং জেলায় ১০৪ জন। এ পর্ষন্ত চট্টগ্রামে মোট শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুহার ০.৯৫ শতাংশ।