সাতছড়ি জাতীয় উদ্যোন-রিসার্ভ ফরেস্টে গোলাবারুদ
বিলুপ্তির হাত থেকে জেগে উঠুক বাটাগুর বাসকা নামক কচ্ছপ
বিলুপ্তির পথে গন্ধগোকুল-আমরা যদি না জাগি মা
জলজঝাঝি-পতঙ্গভূক উদ্ভিদ
আমার দেখা নিঝুম দ্বীপ
ব্রাহ্মীশাক-স্মৃতিবিকাশের সহায়ক
সন্তান কামনায় অনলাইনে শুক্রানু-ন্যায় বনাম অন্যায়
- ticket title
- করোনায় আরো ৬ জনের মৃত্যু
- সাতছড়ি জাতীয় উদ্যোন-রিসার্ভ ফরেস্টে গোলাবারুদ
- বিলুপ্তির হাত থেকে জেগে উঠুক বাটাগুর বাসকা নামক কচ্ছপ
- বিলুপ্তির পথে গন্ধগোকুল-আমরা যদি না জাগি মা
- জলজঝাঝি-পতঙ্গভূক উদ্ভিদ
- আমার দেখা নিঝুম দ্বীপ
- ব্রাহ্মীশাক-স্মৃতিবিকাশের সহায়ক
- সন্তান কামনায় অনলাইনে শুক্রানু-ন্যায় বনাম অন্যায়
- উদ্বোধনের আগেই ধ্বসে পড়ে ব্রিজ
আপনঘরে বাস্তুচ্যুত বাউলমানুষ
মে 20, 2020 / By Green News
Post by relatedRelated post
-
মার্চ 4, 2021
বিলুপ্তির পথে গন্ধগোকুল-আমরা যদি না জাগি মা
-
মার্চ 3, 2021
জলজঝাঝি-পতঙ্গভূক উদ্ভিদ
-
মার্চ 2, 2021
সন্তান কামনায় অনলাইনে শুক্রানু-ন্যায় বনাম অন্যায়
-
মার্চ 2, 2021
উদ্বোধনের আগেই ধ্বসে পড়ে ব্রিজ
করোনাকালের ভয়াল দুর্বিপাকও হিংসুক মানুষের মন টলাতে পারেনি।আগুনে জলসিঞ্চনের সাধনা এদের নাই। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়াতেই এদের পৈশাচিক মনোবিকারিক আনন্দ।
বাউল রণেশ ঠাকুরের গানের ঘরে আগুন, গানের কালাম, বই ও বাদ্যযন্ত্র সব পুড়ে ছাই।
সাদাসিধে সরল জীবনযাপনকারী একজন শিল্পী।| কারো সাথে কোনো বিরোধ নাই। লালন ফকিরের দাস্যভাব যাঁর অন্তরের দিকদিশারি আলো। সেই মানুষটি নিথর, নিস্তব্ধ, হতভম্ব ও নিশ্চল হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর পোড়া ঘরে। একদিন আগে যে ঘরটি ছিল তাঁর সুর সাধনার মন্দির। জীবনের মানে খুঁজে ফিরবার আরাধ্য আখড়া।যে মন্দিরে সাজিয়ে রাখা ছিল সুরের অনুষঙ্গ ঢোল, ছইট্টা, দোতরা, বেহালা, হারমুনিয়ামসহ নানা যন্ত্র।যেখানে সংরক্ষিত ছিল হাজার গানের পবিত্র কালাম।
আজ সবশেষ।ছিন্ন রিক্ত বাউল রণেশ ঠাকুর মর্মে মরে গেছেন। জানি শিল্প ও শিল্পীর মৃত্যু নাই।মহামহিম ঈশ্বর তাঁদেরকে অমরত্বের অমীয় সুধা পান করিয়েই তবে পৃথিবীতে বিরাজ করান।
অথচ দুর্বৃত্তের আগুনে রণেশ ঠাকুরের প্রায় চল্লিশ বছরের সাধনার সব যন্ত্রপাতি, গানের বইপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেল। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের অন্যতম প্রিয় শিষ্য রণেশ ঠাকুরের ‘গানের আসর ঘর’ পুড়িয়ে দেয়া হলো।
গেল রবিবার দিবাগত রাত ১ টার দিকে তাঁর ওই ঘরে আগুন দেয়া হয়।সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজান ধল গ্রাম ঘোর অমানিশার সাক্ষী হলো।
বিদীর্ণ হৃদয়ে নির্বাক রণেশ ঠাকুর অস্ফুটে খবরের মানুষদের বলতে পারল, ‘বসতবাড়িতে আমি থাকি, মরার মতো ঘুমাই, খাইদাই এইসব তো করি।আর আমার আসর ঘর দিয়ে আমি বাঁচি। ওটা আমার সাধনার জায়গা। কারো সাথে তো আমার বিরোধ নাই।আসর পুড়ানোর সাথে সাথে আমার অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে।’
দেশ এখন করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে হিমশিম খাচ্ছে।|ঘরবন্দী হয়ে অন্য সাধারণ মানুষের মতো কর্মহীন হয়ে পড়েছে নির্বিরোধ বাউল শিল্পীরাও।এমন এক সময় বাউল রণেশ ঠাকুরের গানের আসর ঘর দুষ্কৃতিদের দেয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
প্রায় ৫৫ বছর বয়সি এই বাউল ও তার শিষ্য সামন্তের সকল বাদ্য যন্ত্রই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।রণেশ ঠাকুর সারাদিন কেবল হা হুতাশ করেছেন।খবর পেয়ে বিকালে দিরাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।রণেশ ঠাকুর পুলিশকে বলেছেন, গ্রামের বা আশ পাশের কারো সঙ্গেই তার কোন শত্রুতা নেই।কারা যে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তা তিনি বুঝতেই পারছেন না।দুর্বৃত্তরা আগুন ধরানোর সময় ঘরের অন্য অংশে থাকা দুটি ভেড়াকে ছেড়ে দেয়। ভেড়া দুটি অক্ষত রয়েছে।
উজান ধলের রবনী মোহন চক্রবর্তী খ্যাতিমান কীর্ত্তনীয়া ছিলেন।তার ছেলে রুহী ঠাকুর ও রণেশ ঠাকুর বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের অন্যতম শিষ্য বাউল।ওস্তাদ শাহ্ আব্দুল করিম ও বড় ভাই রুহী ঠাকুর মারা যাবার পর ভাটি অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে যে কজন বাউল জনপ্রিয়, এরমধ্যে অন্যতম হরেন এই রণেশ ঠাকুর।বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের বাড়ি লাগোয়া রণেশ ঠাকুরের বাড়িতে করোনাকালের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই বাউল আসর বসতো। রণেশ ঠাকুরের বসত ঘরের উল্টোদিকে তার বাউল আসর ঘর। ওখানেই তাঁর নিজের ও শিষ্যগণের যন্ত্রপাতি থাকতো।
আর আজ সবটাই ভয়াল বিপন্নতার কালো ইতিহাস।
যুগে যুগে কারা এই কুৎসিত জঘন্য ইতিহাসের রূপকার।তা তো কারো অজানা নয়।| মহামতি কোন গোষ্ঠীর দ্বারা সবচে’ বেশি উৎপীড়নের শিকার হয়েছেন তা আমরা জানি।| সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলামকে মুরতাদ ঘোষণা তাঁর জীবনটা বিষিয়ে তুলেছিল কারা।| একালে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র সঙ্গীত স্মৃতিচিহ্ন কারা পুড়িয়ে দিয়েছে।| কারা শরিয়ত বয়াতিকে জেলে পুরেছে।| কারা রীতা দেওয়ানের বিরুদ্ধে মামলা দিল।| কারা মাঝে মাঝেই বাউলদের লম্বা ঝাঁকড়া চুল কেটে নেয়।| কোন স্বার্থান্ধ চক্রটি ধর্মের নামে ওয়াজে, ইউটিউবে বা ফেসবুকে বিষোদগার করে চলেছে।| তাদেরকেও সবাই চেনে।|
এই দেশে কারা কথায় কথায় ঘোষণা দেয়, গান বাজনা, নৃত্য, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র, ভাস্কর্য হারাম।| কারা বলে বেড়ায় পহেলা বৈশাখ পালন করা হারাম।| কারা হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী।| এরা সবার চেনা মুখ।| দুঃখজনক হলেও সত্যি এদের শিষ্যসাবুদেরই এখন দল ভারি।|
এই দেশে ব্যাংক লুট করে হজম করা যায়, চুটায়ে ঘুষ খাওয়া যায়, দুর্নীতি করে পুকুর চুরি করা যায়, ধর্ষন, খুন, বলাৎকার মোল্লা মুনশীদেরও রোজকার অভ্যাস।| ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়ে মিথ্যা ছবক দিয়ে আল্লাহ রাসুলকেও বাজি রাখা যায়।| ঘুরেফিরে বাউল গানটাই হারাম।| কারণ বাউলরা যুক্তিবোধের চর্চা করেন।| মুক্তবুদ্ধি তাদের আরাধনার বড় অংশ।| আর তাদের যুক্তিতে খোদা-ঈশ্বর-ইবলিশ-ধর্মগ্রন্থ কোনোকিছুই বাদ যায় না।| আর সেই বাউলদের অনুসারী বেড়ে যাওয়া মানে তো কিছু মোল্লা-মৌলভীর ধর্ম ব্যবসায় বড় ধস।|
যাদের কথা বললাম তারা নিজেরাই বহুধারায় বিভক্ত হয়ে একে অপরকে কাফির সাব্যস্ত করে হরহামেশা গালাগালির ওপর রাখে।| মাহযাবী, লা মাহযাবি, সালাফি, ওয়াহাবি, সুন্নী, শিয়া, ইবাদী, খারেজি, মওদূদী, কওমী, চরমোনাই, ফুরফুরা, ফরিদপুরি, হাটহাজারী, হেফাজতি, তাবলিগি।| আরও কত কত ধারা।| এবং যত ধারা তত হিংসার আবাদ।|
বাউলরা নিজের লাভ খুঁজে ফেরেন না।| তাই তাদের হিংসার চর্চা করবার প্রশ্নও নাই।| তাহলে এখন সমীকরণ মেলানোর পালা যে, বাউল সম্প্রদায়ের আদি ও আসল প্রতিপক্ষ কারা।|
রণেশ ঠাকুরের ঘর পুড়ালো কারা তা নিশ্চিতই তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়।| ঢালাওভাবে কোনো পক্ষকেই আমরা দায়ি করবো না।|
স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, সুশীল সমাজ, পলিটিক্যাল গ্রুপ কারো হয়ত এ বিষয়ে দায় নাই।| সবাই হয়ত চায় দেশের জারি সারি ভাটিয়ালি মুর্শিদী বা বাউল গানের শিল্পীরা সব এদেশ থেকে অন্যকোনো পরগণায় ভেগে যাক।| হিপোক্রিটদের অভয়ারণ্য এই ধর্মদেশ বাউলদের জন্য আর নয়।|
তবু আশাবাদ এইটুকু যে, ঘটনার পর বিকালে দিরাই থানার সাব ইন্সপেক্টর জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন এবং এই ঘটনায় আশেপাশের মানুষের জড়িত থাকবার সন্দেহ পোষণ করেছেন।|
উজান ধলের ভূমিপুত্র।| বাংলা স্বাজাত্যবোধের প্রতীক।| বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের খাশ শিষ্য রণেশ ঠাকুর।| আমাদের এই বাউল বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দায় হাঁটেননি কোনোকালে।| কিন্তু শোষক আর শোষিতের চিরায়ত শ্রেণীবৈষম্যের যে দ্বন্ধ তা তাঁর আত্মস্থ।| তিনি সমাজতন্ত্র জানেন।| জানেন মার্ক্স ও লেনিন।| একজন গ্রাম্য বাউল যার উদ্দীপনার একচ্ছত্র অংশ জুড়ে আছে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও এর প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু।| এই বাউল ধর্মের লেবাস পড়া পাকিস্তানপ্রেমী দালালদেরও বেশ ভালো চেনেন জানেন।|
যিনি গান গেয়ে আনন্দ বিলান, সত্য ও সুন্দরের সাধনা করেন।| কারা হতে পারে তার ঘরদোর পুড়িয়ে দেয়ার আগুনে ইবলিশ।| কারা হতে পারে তাঁর সহস্র কালাম বিনাশ করে দেয়ার অমানুষ এক্সট্রিমিস্ট।|
আরেকবার সমীকরণ নিজেরাই মিলিয়ে নিন।|
আমরা অতি অবশ্যই এই আপাত নিথর, নিস্তব্ধ ও হতবাক সুরের পাখির সহমর্মী।| তাঁর গানের তীরেরা এভাবেই যুগে যুগে কূপমন্ডুকদের অন্তর্ভেদী হোক।|
একজন মুসলিম ও সর্বপ্রাণবাদী মানুষ হিসেবে আমরা শুধু বাউলসমাজের ওপর বিরাগভাজনদেরকে ধর্মীয় হিতোপদেশ স্মরণ করিয়ে দিতে পারি।|
∆ পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারা’র ২৫৬ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন, ধর্ম মানতে কোনো ধরনের জোর জবরদস্তি নেই। সঠিক পথ ভুল পথ থেকে পরিষ্কারভাবে আলাদা হয়ে গেছে। তাই যে তাগুত (মিথ্যা প্রভুদের) অস্বীকার করবে, এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস আনবে, সে অবশ্যই এমন এক মজবুত হাতল ধরবে, যা ভাঙ্গার কোনো আশঙ্কা নেই। আল্লাহ সব শোনেন, সব জানেন।|
∆ সুরা ইউনুসের ৯৯ নাম্বার ভার্সে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘যদি তোমার প্রভু চাইতেন, তাহলে পৃথিবীতে সবাই অবশ্যই বিশ্বাস করত। তাহলে তুমি কি মানুষকে জোর জবরদস্তি করবে বিশ্বাস না করা পর্যন্ত’?।
∆ সুরা আত তাওবা’র ৬ নাম্বার পঙ্ক্তিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘কোনো মুশরিক (মূর্তি পূজারি) যদি তোমাদের কাছ নিরাপত্তা চায়, তাহলে তাকে তা দেবে, যেন সে আল্লাহর বাণী শোনার সুযোগ পায়। তারপর তাকে একটা নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাবে’।|
∆ মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান (রাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাদের মধ্যে দাঁড়ালেন এবং বললেন, যারা তোমাদের আগে এসেছিল, সেই আহলে কিতাবীগণ ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল, এবং এই উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। ৭২ দল জাহান্নামে যাবে এবং এক দল জান্নাতে যাবে এবং তারা হচ্ছে জামাহ’।(আবু দাউদ ৪৫৯৭)।
এবং
৬২২ খ্রীস্টাব্দে মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক প্রণয়নকৃত ৪৭ ধারার মদিনা সনদের ৮ ও ১১ ধারায় বলা হয়েছিল:
•| অসহায় ও দুর্বলকে সর্বাবস্থায় সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।
•| মুসলমান, ইহুদি ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা পরস্পর বন্ধুসুলভ আচরণ করবে।
বাউলের প্রতি বিরাগ হয়ে আল্লাহর সৃষ্ট মানুষের ঘরে কারা আগুন দিচ্ছেন।| ধর্মে এটা সইবে তো?
লেখক
ফারদিন ফেরদৌস
সাংবাদিক
Advisory Editor
Kazi Sanowar Ahmed Lavlu
Editor
Nurul Afsar Mazumder Swapan
Sub-Editor
Barnadet Adhikary
Dhaka office 38 / D / 3, 1st Floor, dillu Road, Magbazar.
Chittagong Office Flat: 4 D , 5th Floor, Tower Karnafuly, kazir deori. Phone: 01713311758