
চন্দনাইশে আলু খেতে পাতা মোড়ানো রোগ
চন্দনাইশ উপজেলার সাতবাড়িয়া, হাছনদন্ডি, দোহাজারী পৌরসভা, চন্দনাইশ পৌরসভার বিস্তীর্ণ আলু ক্ষেতে পাতা মোড়ানো রোগ (মোজাইক ভাইরাজ) হানা দিয়েছে। গত মৌসুমে আলু ক্ষেতে এ রোগ হানা দেয়ায় বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন চাষিরা। সে মৌসুমের ক্ষতি পুষিয়ে উঠার লক্ষ্যে চলতি মৌসুমেও ক্ষেতে পুরোদমে আলুর বীজ বপন করেছিলেন চাষিরা। কিন্তু এবারও বিস্তীর্ণ আলু ক্ষেত একই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ায় আবারো বিপুল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হলো কৃষকদের। চাষিদের দেয়া তথ্য মতে এ মৌসুমে তাদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। আলু গাছ এ রোগে আক্রান্ত হলে আলু ছোট আকারের হয় বলে জানান আলু চাষি ও কৃষি অফিস সংশ্লিষ্টরা। ফলে আলু চাষিরা এ মৌসুমেও কমপক্ষে ২০ কোটি টাকার লোকসানের কবলে পড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
জানা যায়, প্রতি মৌসুমের ন্যায় চলতি মৌসুমেও আলু চাষিরা যথা নিয়মে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে ক্ষেতে পুরোদমে আলু রোপণ শুরু করেন। শুরুর দিকে ঠিকটাকভাবে আলু গাছের চারা গজিয়ে উঠলেও গাছে পাতা মেলার সাথে সাথে অধিকাংশ গাছ পাতা মোড়ানো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে চন্দনাইশে প্রায় ১ হাজার ৭শ’ একর জমিতে আলু চাষ করেন চাষিরা।
সাতবাড়িয়ার হাছনদন্ডি এলাকার আলু চাষি মো. ওসমানের দেয়া তথ্য মতে ১ খানি জমির খাজনা ৫ হাজার, ৫ মণ বীজ আলু ১০ হাজার, সার ৬ হাজার, জমি তৈরি, আলু রোপন, সার প্রয়োগ, পরিচর্যা, কীটনাশক প্রয়োগে আরো ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা মিলে প্রতি কানি আলু চাষে কৃষকদের উদপাদন খরচ পড়ে ৩০ হাজার টাকা। সে হিসেবে চলতি মৌসুমে ৫ খানি আলু চাষে তার মোট খরচ হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে আলুর ফলন হলে প্রতি খানি জমিতে ৬৫ থেকে ৭০ মণ আলু উদপাদন হয়। প্রতি মণ আলু ১ হাজার টাকা হিসেবে প্রতি খানিতে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এতে খরচ বাদ দিয়ে প্রতি কানিতে লাভ হয় কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু চলতি মৌসুমে পাতা মোড়ানো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ায় প্রতি খানি জমিতে ১৫ মণ আলুও উদপাদন হয়নি। তার হিসাব মতে চলতি মৌসুমে তার প্রতি কানিতে লোকসান হয়েছে ১৫ হাজার টাকার উপরে। অন্যান্য আলু চাষিদের দেয়া তথ্য মতে চলতি মৌসুমে চন্দনাইশে প্রায় ৩ হাজার চাষি ২০ কোটি টাকার লোকসানে পড়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উৎপাদন খরচ না উঠায় অনেক চাষি আলু উত্তোলন থেকে বিরত রয়েছেন। পূর্ব হাছনদন্ডি এলাকার আলু চাষি মো. আবু ইউসুফ জানান, তিনি এ বছর ৪০ শতক (১কানি) জমিতে আলু রোপন করেন। ক্ষেতে আলু গাছ গজিয়ে উঠার পরপরই পাতা মোড়ানো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, গত বছর তার ক্ষেতে ৪০ শতক (১ কানি) জমিতে ৪০ মণ আলু উৎপাদন হলেও চলতি মৌসুমে ১০ মণ আলু ও হয়নি। আলুর সাইজ ছোট হয়ে বিশাল এ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। শুধু আবু ইউসুফ নয়, এলাকার অধিকাংশ আলু ক্ষেতে এ রোগ বিস্তার করায় লোকসানের মুখে পড়েছে প্রায় সকল আলু চাষি। তিনি জানান বিগত কয়েক বছর ধরে এ রোগটি বিস্তার লাভ করেছে।
চাষিরা জানান, বিগত ৬/৭ বছর পূর্বে এ রোগটি আরেকবার দেখা দিলেও তা ফলনে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। একই এলাকার এনু মিয়া চলতি মৌসুমে ১ একর (আড়াই কানি), হাছনদন্ডি এলাকার আইয়ুব আলী সমপরিমাণ জমিতে আলুর চাষ করে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
এলাকার অপর আলু চাষি জামাল উদ্দীন জানান, গত মৌসুমে তিনি ১২ কানি জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। সে বছর তার পুরো ক্ষেত পাতা মোড়ানো রোগে আক্রান্ত হওয়ায় বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হন। তাই চলতি মৌসুমে তিনি আলু চাষ থেকে বিরত ছিলেন।
চন্দনাইশ উপজেলার সাতবাড়িয়া হাছনদন্ডি ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মধুসুদন চৌধুরী জানান, মোজাইক নামের এক প্রকার ভাইরাস আলু ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়লে আলু গাছের পাতা মরে যায়। বীজ বাহিত এ রোগের কোন ওষুধ নেই। আমরা এ রোগ বিস্তারকারি বাহক পোকা দমনে কৃষকদের আলু ক্ষেতে মাসে অন্তত ২ থেকে ৩ বার করে ইডো, ইমিটাফ, এডমায়ার নামক কীটনাশক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু অধিকাংশ কৃষক সে পরামর্শ কানে তুলেনি। ফলে বরাবরের মতো তাদের ক্ষেত মোজাইক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
চলতি মৌসুমেও আলু ক্ষেতে এ রোগটি বিস্তার করার কথা স্বীকার করে চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার বলেন, এ অঞ্চলের চাষিরা প্রতিবারই স্থানীয় জাতের আলু চাষ করে থাকেন। আলুর জাত পরিবর্তন অথবা ২/৩ বছর বিরতি দিয়ে আলু চাষের পরামর্শ দেয়া হলেও তারা একই জাতের আলু চাষ করেন। জাত পরিবর্তন করে আলু রোপন করলে বা ক্ষেতে অন্য কোন সবজির চাষ করলে এ রোগটি এড়ানো যাবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, কৃষকরা আলু চাষ করার পর থেকেই কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে আলু চাষিদের ক্ষতি যাতে কম হয় সে জন্য বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার ও নানা পরামর্শ দিয়ে এসেছি।
তিনি বলেন, যে সমস্ত কৃষক পরামর্শ মতো ক্ষেতে স্থানীয় জাতের পরিবর্তনে অন্য জাত রোপণ এবং নিয়মিত কীটনাশক ব্যবহার করেছেন তারা ক্ষতির সম্মুখীন হননি।