
সুরমার ভাঙনে ঝুঁকিতে মঈনপুর স্কুল
যেকোনো মুহূর্তে সুরমা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে সুনামগঞ্জ সদরের মঈনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আতঙ্কিত স্কুল কর্তৃপক্ষ গত মঙ্গলবার সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ফ্লাড শেল্টারে স্থানান্তর করেছে। খবর পেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থী ও দপ্তরিদের দিয়ে স্কুলের মূল্যবান জিনিসপত্র পাশের একটি ফ্লাড শেল্টারে নিয়ে যাচ্ছেন। সকালে ভাঙনের তীব্রতা দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ফোন করে বিষয়টি জানায়। পরে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ এলাকার লোকজন। কিছুক্ষণ পরই সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ঘটনাস্থলে আসেন।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রাহাতুন নেছা বলে, ‘সকাইলে আইয়া আমরা দেখি সামনের অংশ নদীত ভাইঙ্গা পরের। পরে আমার ম্যাডামরা আইয়া সব জিনিস আমরারে দিয়া সরাইছন।’
স্কুল সূত্রে জানা যায়, আগামী ৩ ডিসেম্বর থেকে স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। তা ছাড়া স্কুলে ভোটকেন্দ্র থাকায় আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
স্কুলের শিক্ষক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৪ সালে ওই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮২ সালে বর্তমান টিনশেডের ভবনটি নির্মাণ করা হয়। স্কুলের সামনে একসময় বিরাট খেলার মাঠ ছিল। গত কয়েক বছর ধরে ভাঙনের কারণে মাঠটি এরই মধ্যে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগেও স্কুলের সামনে প্রায় ২৫-৩০ ফুট জমি ছিল। কিন্তু এক সপ্তাহেই সেগুলো ভেঙে নদীগর্ভে চলে গেছে। স্কুলের বারান্দার সামনের অংশ থেকে তিন থেকে চার ফুট দূরেই ভাঙন স্পষ্ট। বারান্দার পিলারের পাশেই বিশাল ফাটল দেখা দিয়েছে। স্কুলের উত্তর-দক্ষিণের সামনের অংশ ভেঙে নিচে নেমে গেছে। ঝুঁকির কারণে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মাহমুদ আলী বলে, ‘আমার মা-বাফ আমারে এখন ইস্কুলে আইতে দেইন না। তারা খইন ইস্কুল যে কোনো বালা (সময়) ভাঙ্গি যিব। আমরাও ডর করে।’
স্থানীয় যুবক ও ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র রুবেল বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলেছি। প্রতিবছর টুর্নামেন্ট হতো। কিন্ত গত কয়েক বছরে মাঠ নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। এখন স্কুলটিও গিলতে বসেছে সর্বনাশা সুরমা নদী। শুধু স্কুলই নয়, সুরমার গর্ভে চলে যাচ্ছে মঈনপুর গ্রামের মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি।’ ভাঙন ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইলা রাণী পাল বলেন, ‘যেকোনো মুহূর্তেই নদীগর্ভে হারিয়ে যেতে পারে আমাদের স্কুলটি।’ সদরের উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সোলেমান মিয়া বলেন, ‘এক সপ্তাহের ব্যবধানেই স্কুলের সামনের অংশ ভেঙে গেছে। যেটুকু বাকি আছে যেকোনো সময়ই ভেঙে যেতে পারে। আমরা তাদেরকে স্কুলের সব জিনিস সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। স্কুলের টিন খুলে পাশের কোথাও খোলা জায়গায় অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তা ছাড়া এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও লিখিতভাবে জানাব।’
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছি।’