পদ্মার বেপরোয়া ভাঙনে অসহায় হাজারো মানুষ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গায় পদ্মা নদীতে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গত দুই সপ্তাহের ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বাড়িঘর, ফসলি জমিসহ অসংখ্য আমবাগান। ভিটামাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন উপজেলার কয়েক গ্রামের হাজারো মানুষ। হুমকির মধ্যে রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির তিনটি ফাঁড়ি, চরবাগডাঙ্গা ইউপি ভবন, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদরাসাসহ স্থানীয় হাটবাজার। এ পরিস্থিতিতে বিজিবির চরবাগডাঙ্গা সীমান্ত ফাঁড়ি রক্ষায় বালুর বস্তা ফেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই দশক ধরে বর্ষা মৌসুমে পদ্মার ভাঙনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আলাতুলি, দেবীনগর, নারায়ণপুর, সুন্দরপুর ও চরবাগডাঙ্গা এবং শিবগঞ্জের পাকা ও উজিরপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। আর নদীভাঙনে এসব এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ, সেতু, কালভার্ট, বসতবাড়ি, আমবাগান ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। ভাঙন প্রতিরোধে সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ২০ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাত্র আড়াই কিলোমিটার এলাকায় এখনো বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। আর এই অরক্ষিত স্থানেই চলছে ভয়াবহ নদীভাঙন।

সরেজমিন দেখা গেছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে গোয়ালডুবি থেকে ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার এলাকায় নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে কাইরাপাড়া গ্রামের দেড় শতাধিক বাড়িঘর, বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ও আমবাগান পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় নদী তীরবর্তী লোকজন আতঙ্কে তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছে, কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় পদ্মার ভাঙন চলছে। এ সময় মালবাগডাঙ্গা, রোডপাড়া ও কাইরাপাড়ার বেশির ভাগ এলাকা নদীগর্ভে চলে যায়। স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।

চরবাগডাঙ্গার কাইরাপাড়ার আতাউর রহমান বলেন, ‘বছরতিনেক আগেও এই নদী প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ছিল। ভাঙতে ভাঙতে এখন আমাদের গ্রামে চলে এসেছে। বাড়িঘর ও জমিজমা নদীতে নেমে গেছে, এখন থাকব কোথায়?’

বিলাত মড়লের গাঁ এলাকার শহিদুল ইসলাম জানান, ভাঙন ঠেকাতে এখানে বাঁধ নির্মাণের কথা অনেক দিন ধরে শুনছি, কিন্তু নির্মাণ হচ্ছে না। ফলে আগ্রাসী পদ্মায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম জানান, বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুরোধে চরবাগডাঙ্গা ক্যাম্প রক্ষায় ওই এলাকায় বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে পাউবো। তিনি আরো বলেন, চরবাগডাঙ্গা এলাকায় ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণের জন্য এর আগে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তিন বছর আগের এই নকশা গ্রহণ না করে তা হালনাগাদ করতে বলায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হলে চরবাগডাঙ্গায় নদীতীর সংরক্ষণকাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

Sharing is caring!

Related Articles

Back to top button