
দূষণ-দখলে বিলুপ্তির পথে ভাসানটেক খাল
দখলের প্রতিযোগিতায় আজ বিলুপ্তির পথে ভাসানটেক খাল।ঢাকা সিটি করপোরেশনের যে কয়টি খাল স্যুয়ারেজের কাজ করে এবং শহরের পানি নিষ্কাশনে ভূমিকা পালন করে, এই খাল সেগুলোর অন্যতম। খালটি মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে ভাসানটেক, মাটিকাটা, মানিকদি, বালুঘাট হয়ে আশুলিয়ার তুরাগে গিয়ে মিলেছে। খালটি আরো চারটি শাখায় বিভক্ত হয়ে একটি শাখা বাউনিয়া খাল, একটি শাখা বাইশটেকী হয়ে প্যারিস রোড খাল ও অপর দুটি খাল যথাক্রমে মিরপুর ১০ নম্বর ও মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের মধ্য দিয়ে তুরাগ ও বুড়িগঙ্গায় মিলিত হয়েছে। খালটি মিরপুর ১৩, ১৪, ভাসানটেকসহ আশপাশের অঞ্চলের স্যুয়ারেজের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র অবলম্বন। একসময় এর প্রশস্ততা ছিল বিশাল, কালের পরিক্রমায় এটি পলিমাটি পড়ে তার ওপর দখল প্রক্রিয়ার কারণে আজ একটি সরু নালায় পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই খালের বর্তমান প্রশস্ততা কোথাও পাঁচ ফুট, কোথাও তিন ফুট মাত্র।
স্থানীয় বাসিন্দা খোকন মিয়া বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, খালটি এ অঞ্চলের স্যুয়ারেজের ও বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা। খালটির বেশির ভাগ জায়গা ভূমিদস্যুদের দখলে চলে গেছে। শুধু তা-ই নয়, ওয়াসা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এর গভীরতাও কমে গেছে। যে কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই এ খাল উপচে ময়লা ও দুর্ঘন্ধযুক্ত পানিতে ওই এলাকা প্লাবিত হয়। এতে এলাকার মানুষ চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এ পরিস্থিতিতে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খালটি যদি দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার না করে, তাহলে খুব শিগগিরই এর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। আর এই খাল বিলীন হয়ে গেলে এলাকার জনগণ জলাবদ্ধতাসহ নানামুখী বিপদের সম্মুখীন হবে।’
আরেক স্থায়ী বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, তখন সেই দলের নামধারী নেতারা এই খাল দখলের রাজত্ব করে। খালটি যদি আগের মতো প্রশস্ত থাকত, তাহলে আমরা বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতাম।’
দখলদারদের একজন রেজাউল করিম ‘দারোগা’। খালের বেশ কিছু জায়গা দখল করে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে ঘর তুলে বস্তি বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন। তিনি পুলিশের লোক বলে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলতে চান না। আরেক দখলদার শাহজাহান, তিনি খালের জায়গা দখল করে বাঁশের ব্যবসা করেন। খালের জায়গা দখল করে বাঁশের আড়ত দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মাচা বানিয়েছি তাতে কী হয়েছে? দারোগা সাহেব তো বিল্ডিং ও বস্তি বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন, তাঁকে তো কিছু বলতে পারেন না। আমি গরিব মানুষ, বাঁশ বেচে সংসার চালাই, সরকার উচ্ছেদ করলে উঠে যাব।’
আরেক দখলদার চান মিয়া। তিনি খালের মধ্যে টং দোকান বসিয়ে চা বিক্রি করছেন। তাঁর কাছে খাল দখল করে দোকান দিয়েছেন কেন জানতে চাইলে বলেন, ‘আমরা ভাই গরিব মানুষ, বাঁচার জন্য এই দোকানটি বসিয়েছি। সরকার যদি উঠিয়ে দেয় তাহলে উঠে যাব। আমাদের মতো গরিবের তো লাখ টাকা ব্যয় করে দোকান দেওয়া সম্ভব না।’
ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছালেক মোল্লা বলেন, ‘আশির দশকেও খালটি বেশ প্রশস্ত ছিল। এ খালের পানি দিয়ে এলাকায় চাষবাস হতো। কিন্তু পলি মাটি পড়ায় নাব্যতা কমে গেছে এবং সংস্কার না করার কারণে খালটি ভরাট হয়ে গেছে। নানা ধরনের ময়লা-আবর্জনায়ও ভরে গেছে খালটি। এ ছাড়া দখলপ্রক্রিয়া তো আছেই। দ্রুত দখল উচ্ছেদ ও সংস্কার না করালে খালটি অস্তিত্ব হারাবে। ফলে এলাকাবাসী জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যায় পতিত হবে। আমি প্রতিনিধি হওয়ার পর থেকে খালটি দখলমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের প্রয়াত মেয়র মহোদয় থাকাকালে খালটি খননের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তা বন্ধ হয়ে যায়। কেন বন্ধ হলো তা আমি জানি না। এই দখলের বিরুদ্ধে ভাসানটেক ও কাফরুল থানায় আমি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। আশা রাখি, খুব দ্রুত খালটি পুনর্খনন ও দখলমুক্ত করে একটি সুন্দর পরিবেশ উপহার দেওয়া যাবে।’