
ভোলায় আরেকটি গ্যাসক্ষেত্র
এবার ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের মাঝিরহাটে নতুন একটি গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার আশা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কম্পানি (বাপেক্স)। এ ক্ষেত্রে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) গ্যাস থাকতে পারে বলে তাদের ধারণা। অনুসন্ধান কূপ খনন পর্যায়ে নতুন এ গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এটি হবে দেশের ২৭তম গ্যাসক্ষেত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে নতুন এই আশার কথা জানান।
এর আগে ভোলারই বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহবাজপুরে গ্যাস পায় বাপেক্স। ‘ভোলা ইস্ট-১’ নামে এই ক্ষেত্রে পৌনে এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর নতুন ক্ষেত্র ‘ভোলা নর্থ-১’-এ আরো ৬০০ বিসিএফ মজুদ থাকলে ভোলায় গ্যাসের মজুদ দাড়াবে ১ দশমিক ৫ টিসিএফ।
নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সম্ভাবনা নিয়ে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগেও আপনাদের বলেছিলাম, ভোলায় আমরা গ্যাস পেয়েছি (গত অক্টোবরে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে পরীক্ষামূলক উত্তোলন)। নতুন আরেকটা কূপ খনন করে সেখানেও প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে (ভেদুরিয়ার মাঝিরহাটে)।’
বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, নতুন ওই ক্ষেত্রে ৬০০ বিসিএফ গ্যাস পাওয়া যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে আশা করা হচ্ছে। এটি হবে দেশের ২৭তম গ্যাসক্ষেত্র। সেখানে খনন করা হলে আরো গ্যাস পাওয়া যাবে বলে সরকার আশা করছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভোলায় গ্যাসের সন্ধানে আরো কূপ খননের ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দ্বীপ জেলা ভোলায় বিদ্যুেকন্দ্র করে সেখানে এই গ্যাস ব্যবহার করা যায়। প্রয়োজনে পাইপলাইনের মাধ্যমেও ওই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিয়ে আসা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক দিন থেকেই ভেদুরিয়ায় গ্যাসকূপ খননের সময় গ্যাসের স্তর অনুভব করতে পারছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এতে মনে করা হচ্ছে, এখানে গ্যাস রয়েছে।
বাপেক্সের খনন বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, গত ৭ জানুয়ারি তিন হাজার ২৩৬ মিটার থেকে তিন হাজার ২৪৫ মিটার গভীরতায় খননের পর্যায়ে ৯ মিটারের একটি গ্যাস স্তর আছে বলে মনে করা হয়। এরপর গত ১০ জানুয়ারি কূপের তিন হাজার ২৬০ থেকে তিন হাজার ২৮৫ মিটার গভীরতায় ২৫ মিটারের আরেকটি গ্যাস স্তর রয়েছে বলে বোঝা গেছে। কূপটি তিন হাজার ৪৫০ মিটার পর্যন্ত খনন করা হবে। তবে ডিএসটি (উন্নয়ন কূপ) না করা পর্যন্ত গ্যাসের মজুদ এবং অন্যান্য বিষয়ে নিশ্চিত ধারণা পাওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করা হয়।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেশের বাইরে রয়েছেন। এ বিষয়ে অন্য কর্মকর্তারা কোনো কথা বলতে চাননি।
বাপেক্সের আবিষ্কৃত ভেদুরিয়ার এ গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে কূপ খননের কাজ করছে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম। এ ক্ষেত্রের গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলে সরবরাহ করার কথা ভাবছে সরকার। এতে খুলনায় মৃত শিল্পাঞ্চল আবার প্রাণ ফিরে পাবে বলে বিশ্বাস সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের।
গত ৯ ডিসেম্বর এই গ্যাসকূপ খননকাজের উদ্বোধন করা হয়। এর আগে গত ২৩ অক্টোবর শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় পৌনে এক টিসিএফ গ্যাস পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে বাপেক্স। ভোলা পূর্ব নামে এ গ্যাসক্ষেত্র থেকে ভোলা উত্তর গ্যাসক্ষেত্রটির দূরত্ব প্রায় ৩৭ কিলোমিটার।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রূপকল্প ২০২১ অনুযায়ী দেশের স্থলভাগে ১০৮টি কূপ খননের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভোলায় গ্যাসপ্রম প্রায় ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি অনুসন্ধান কূপ খনন করছে। এর আগে একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করলেও সেখানে গ্যাস পাওয়া যায়নি।
দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১২ টিসিএফ গ্যাসের মজুদ রয়েছে। যদি আর কোনো নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হয় তাহলে এ মজুদ ২০৩০ সালের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা যাতে ব্যাহত না হয় সে জন্য সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া নতুন গ্যাসক্ষেত্রে আবিষ্কারের লক্ষ্যে আজারবাইজানের সাকার, রাশিয়ার গ্যাজপ্রম ও চীনের সিনোপ্যাককে দিয়ে সরকার ১৩টি অনুসন্ধানকূপ খননের পরিকল্পনা করেছে। গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসার আগেই স্থলভাগের সব জায়গায় অনুসন্ধান চালাতে চায় সরকার।