
বরিশালের দুর্গাসাগর দীঘিকে সাগর হিসেবে কল্পনা করা হয়
বিশাল এক দীঘি, তার মাঝে সুন্দর একটি দ্বীপ। সুবিশাল সিমেন্টের প্রশস্ত ঘাটলা, দীঘির মাঝের দ্বীপ পাখিদের কল-কাকলিতে মুখর। দীঘির পারে সরু রাস্তা, মাঝে-মধ্যে বসার জন্য বেঞ্চ, ঘন সবুজ বিভিন্ন ধরনের গাছ প্রকৃতিপ্রেমীদের দেয় অনাবিল সুখ। বাবুগঞ্জের সর্ববৃহৎ দীঘি ‘দুর্গাসাগর’ যেনো পর্যটকদের জন্য অন্যতম একটি স্থান। এ সাগর হতে পারে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র। দুই হাজার পাঁচশ’ হেক্টর আয়তনের দুর্গাসাগর দীঘিকে সাগর হিসেবে কল্পনা করা হলেও মাঝখানের টিলাটি যেন একটি দ্বীপ। বাতাসের বেগ একটু বেশি হলেই দুর্গাসাগরে ঢেউ ওঠে। আর সেসব ছোট ছোট ঢেউয়ে ভেসে ওঠে পাড়ের বৃক্ষরাজির ছায়া।
বরিশাল শহর থেকে মাত্র ১১ কিঃমিঃ দূরত্বের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশায় মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে ভরপুর দুর্গাসাগর। বছরের কোনো একসময় টিকিট কেটে বঁড়শি দিয়ে মাছ ধরার সুযোগ রয়েছে এখানে। সাগর ঘেঁষা প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপ বার বার বর্মি আর পর্তুগিজ জলদস্যুদের অবাধ লুণ্ঠন ক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় শ্রীনগর (মাধবপাশায়) চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করেন চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশের কীর্তিমান পুরুষ রাজা রামচন্দ্র। রাজবাড়ির কিছুই এখন অবশিষ্ট নেই। বেশ কিছু দীঘি থাকলেও তার অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। যা রয়েছে তা এখন শুধু কালের সাক্ষী। রাজবংশের উত্তরসূরিরা বর্তমানে ভারতে বসবাস করছেন। ১৯৫০ সালের দাঙ্গায় জমিদার বাড়িতে কয়েকশ’ হিন্দুকে হত্যা করা হয়। রাজবংশের রাজা শিব নারায়ণের স্ত্রী রানি দুর্গাবতী ১৭৮০ সালে বিশাল এ দীঘিটি খনন করান। তার নামেই এই দীঘিটি ‘দুর্গাসাগর’ নামে পরিচিত। এত বড় দীঘি বরিশাল বিভাগে আর কোথাও নেই। এটি এখন পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা এ দীঘির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন দূর-দূরান্ত থেকে।
২৩৩ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ দীঘিটি সর্বশেষ ১৯৭৫ সালে তত্কালীন মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত পুনঃখনন ও সংস্কার করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে এর অবস্থা তথৈবচ। যেখানে সেখানে ময়লা দূর্গাসাগরের বুকে ভাসছে, গাছ উপরে পড়ে আছে এদিক সেদিক। সংস্কার আর রক্ষনাবেক্ষনের পর্যাপ্ত কর্মী নেই, যারা আছে তারা উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনের জন্যই ব্যতিব্যস্ত। দর্শনার্থী বা সাধারণ পর্যটকদের সমস্যা দেখার সময় তাদের নেই। এই সুযোগে কিছু প্রেমিক গাছের আড়ালে বসে অনৈতিক কার্যকলাপের সুযোগ পায়।
ঐতিহ্যবাহী এ দীঘিটির সংস্কার ও উন্নয়নে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে এটিকে আরো দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে দর্শনার্থীরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সূত্রঃ নেট