
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে
বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার এই বদল শুধু এ বছর নয়, ৩০ বছর ধরে ঘটছে। গত ৩০ বছরে দেশের চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টিপাত ক্রমাগত বাড়ছে। এতে ওই এলাকায় পাহাড়ধস বাড়ছে। অন্যদিকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে আসছে। প্রাকৃতিকভাবেই লবণাক্ত ওই এলাকায় বৃষ্টি কমায় পানি ও মাটির লবণাক্ততা আরও বাড়ছে। ফলে ওই এলাকার ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি গবেষকেরা একে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হিসেবে দেখছেন। এর ফলে দেশে খাদ্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে, নতুন নতুন দুর্যোগ বাড়ছে, রোগবালাইয়ের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে আর বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুতও হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নানামুখি সমস্যায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশের মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান শিকার এ দেশের উপকূলীয় অঞ্চল। জনসংখ্যার ঘনত্ব, দরিদ্রতা ও নিরক্ষতার কারণে এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করছে।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির উচ্চতা বেড়ে উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। কৃষিজমিতে লবণাক্ততার পরিমান বেড়ে একদিকে যেমন ফসল নষ্ট হচ্ছে তেমনি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গোটা পরিবেশ।
জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক জাতিসংঘের আন্তসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) চতুর্থ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এই শতকের মধ্যে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ডুবে যেতে পারে। দেশের ১৯টি জেলার প্রায় ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ওই ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। এর ফলে প্রায় দুই কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে হওয়া ওই গবেষণায় দেখা গেছে, এই শতকের মধ্যে বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা এক মিটার বাড়লে দেশের ৩ হাজার ৯৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ডুবে যেতে পারে। দেশের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ৪ শতাংশ এলাকা থেকে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা জার্মান ওয়াচের এ বছরের প্রতিবেদন বলছে, গত ৩০ বছরে বাংলাদেশ ১৮৫ বার চরম বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়েছে, যা বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বে বিরূপ আবহাওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখে থাকা দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। আর বৈরী আবহাওয়ার কারণে মানুষের মৃত্যু হওয়ার দিক থেকে তৃতীয় দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।