
আড়িয়ল বিল আমাদের ঐতিহ্য
বিখ্যাত আড়িয়ল বিল যা আমাদের ঐতিহ্য। বিক্রমপুরের ইতিহাস প্রণেতা যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত উল্লেখ করেছেন, এই বিল দৈর্ঘ্যে ১২ মাইল আর প্রস্থে ১০ মাইল ( ০১ মাইল = ০২ কিঃ মিঃ)। এক সময় এই বিল বর্ষা মৌসুমে পাড়ি দেয়া ছিল অনেক কষ্টকর। অভিজ্ঞ মাঝি ভিন্ন এই বিল পারি দিতে সাহসী হতো না। বর্ষায় এই বিল তখন একটা ছোট খাট সাগরে রূপ নিত। ছিল প্রচন্ড ঢেউ। ডাকাতের উপদ্রবতো ছিলই। তাই সন্ধ্যার পর কেউ এই বিল পাড়ি দিত না।
এই বিল চুড়াইন বিল বা আইড়ল নামেও পরিচিত। ঐতিহাসিকদের মতে এক সময় ব্রহ্মপুত্র নদ আড়িয়ল বিল দিয়ে প্রবাহিত হতো, পদ্মার যখন ব্রহ্মপুত্রের সাথে সম্মিলন ঘটে, এবং এই সম্মিলন বা সঙ্গমের ফলে এই বিলের সৃষ্টি হয়। গাদিঘাট নামের সাথে এই সত্য লুকিয়ে আছে। কারন ওখানে কোন এক সময় একটি ঘাট বা বন্দর ছিল, আর তা থেকে নামের উৎপত্তি গাদিঘাট।
বর্ষা মৌসুমে এখন ভ্রমন পিপাসুদের অন্যতম ভে্ন্যু এখন আড়িয়ল বিল। একটি স্যালো ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ভাড়া নিয়ে আপনি সারাদিনের জন্য বেড়িয়ে পরতে পারেন আড়িয়ল বিল দর্শনে। রান্না খাওয়া-দাওয়া সব ট্রলারে। প্রথমেই আপনাকে স্বাগত জানাবে বিলের ভাসমান কলমি রাণী। গলা অবধি ডুবে থাকা হিজল গাছের সারি। বিস্ময়ে অপলক নেত্রে আপনাকে দেখবে লোকালয়, আর আপনি উপভোগ করবেন সুন্দরীতমা লোকালয়কে।
আড়িয়ল বিলে রয়েছে বড় বড় পুকুর, স্থানীয় ভাবে এই পুকুরকে ডাঙ্গা বলে। আড়িয়ল বিলের অন্যতম বৃহৎ ডাঙ্গার নাম সাগর ডাঙ্গা, এই ডাঙ্গার মালিকের নাম পরশুরাম দাস, তিনি গত হয়েছেন এখন তার ছেলে এই ডাঙ্গার মালিক। আড়িয়ল বিলের এই সব ডাঙ্গায় কোন মাছ চাষ হয়না। প্রকৃতিগতভাবে দেশীয় মাছের অভয়াশ্রম এই ডাঙ্গা। এই জন্য জেলেরা বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই মাছের নিরাপদ বাসস্থান এবং খাদ্যের জন্য হিজল আর তেতুলের ডাল ডাঙ্গায় ফেলে। আড়িয়ল বিলের কৈ, মাগুর ও শোল মাছ জগৎ বিখ্যাত। বাংলার বিখ্যাত সব ইতিহাস প্রণেতারা আড়িয়ল বিলের কৈ মাছের কথা উল্লেখ করেছেন।
আড়িয়ল বিল ভ্রমনে আপনি দেখতে পাবেন শান্ত অথচ ব্যস্ত এক আড়িয়ল বিলকে। পুরো আড়িয়ল বিল জুড়ে রয়েছে মাকড়সার জালের মতো বিছানো অসংখ্য খাল। এই খালকে ঝোড়া খাল বলে, এই সব খাল আবার যুক্ত আছে প্রধান খালের সাথে, আর প্রধান খাল যুক্ত আছে উত্তরে ধলেশ্বরী নদ আর দক্ষিণে পদ্মার সাথে। শুকনো মৌসুমে এই সব খাল থেকেই কৃষক তার জমিতে সেচ দিয়ে থাকে। আড়িয়ল বিলের ঝোড়া খালে ভেসাল জাল ফেলে মাছ ধরছে জেলে। পুরো আড়িয়ল বিল জুড়ে রয়েছে অসংখ্য ভেসাল। যেন মাছের মহোৎসব চলছে আড়িয়ল বিলে।
আপনি দেখতে পাবেন বিলের ভাসমান জনপথগুলি। যেখানে যেগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছোট ছোট নৌকা, এই সব নৌকাকে কোষা নৌকা বলে। এপাড়া ও পাড়া,স্কুল, বাজার-হাট, বিলে গমনাগমনের জন্য এই কোষা ব্যবহার হয়। দুপুরে বিলের নীলাভ স্বচ্ছ জলে নেমে যেতে ইচ্ছে করবে। তখন কোন লোকালয়ে থেমে কিছুক্ষণ করে নিতে পারেন জলকেলি।
বিকেলে বিলকে মনে হয় আরো মনোহর। যেন আপনি কোন এক সমুদ্র সৈকতের তীরে দাঁড়িয়ে অস্তমিত সূর্যকে অবলোকন করছেন। আর যখন ফেরার সময় হবে সাথে নিয়ে আসবেন বিলের একরাশ সৌন্দর্য্য আর স্মৃতি। সাথে নিয়ে আসবেন বিলের লোকালয়ের মানুষের জীবনাচরন।
ছবি ও লেখাঃ Khaled Siddique Bulet