
ঋণখেলাপীর প্রাসাদোপম অট্টালিকা ‘বুলবুল-কইয়ের তেলে কই ভাঁজা
গাজীপুরের টঙ্গীতে নয় একর জায়গার ওপর প্রাসাদোপম অট্টালিকা ‘বুলবুল’। হেলিপ্যাড থেকে শুরু করে সুইমিংপুল, স্টিমবাথসহ রয়েছে আধুনিক সব সুবিধাই। চারতলা ভবনের আসবাবসহ অন্দরসজ্জার প্রায় সব উপকরণই এসেছে বিদেশ থেকে। বিলাসবহুল এ অট্টালিকা নির্মাণে আনন্দ শিপইয়ার্ডের কর্ণধার আবদুল্লাহেল বারী ব্যয় করেছেন ৩০০ কোটি টাকার বেশি। জনশ্রুতি আছে, এ ব্যয়ের সবটাই তিনি করেছেন আনন্দ শিপইয়ার্ডের নামে নেয়া ঋণের অর্থে। কইয়ের তেলে কই ভাঁজা প্রবাদটি এই ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা এখনো প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এর বড় অংশ আবার খেলাপি।
জানা গেছে, জাহাজ নির্মাণ ও রফতানির নামে ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণ নিলেও এর বড় অংশ অন্য খাতে ব্যয় করেছেন তিনি। নিয়মিত তা পরিশোধ না করায় বড় অংকের ঋণ এরই মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে। জাহাজ নির্মাণ ব্যবসা গুটিয়ে আসায় ওই অর্থ আদায়ে উদ্বেগ বাড়ছে ব্যাংকগুলোর। প্রায় ৮০০ কোটি টাকা আদায়ে ২০১৫ সালে আনন্দ শিপইয়ার্ডের বিরুদ্ধে মামলা করে প্রতিষ্ঠানটিতে সবচেয়ে বেশি অর্থায়নকারী ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। সর্বশেষ হিসাব বছরে তারা কিছু ঋণ পরিশোধ করেছে। তার পরও আনন্দ শিপইয়ার্ডের কাছে ৫৭৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে ব্যাংকটির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, আনন্দ শিপইয়ার্ডের বিধ্বস্ততার কথা জানিয়ে কোম্পানির কর্মকর্তারা ব্যাংকের কাছে আকুতি জানিয়েছেন। সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ইসলামী ব্যাংক সোলেনামায় (আপস-মীমাংসা) গেছে। আশা করছি, প্রতিষ্ঠানটি ঋণ পরিশোধ করতে সমর্থ হবে।
আনন্দ শিপইয়ার্ডে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণ রয়েছে জনতা ব্যাংকের। এ ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ ২৩৮ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ ঋণ রয়েছে ওয়ান ব্যাংকের। সর্বশেষ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির মতিঝিল শাখার পাওনা দাঁড়িয়েছে ২২৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ বাবদ পাওনা টাকায় শীর্ষে রয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাাংকও। আনন্দ গ্রুপ সমঝোতার ভিত্তিতে ব্যাংকটিকে কিছু অর্থ পরিশোধ করলেও সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে মোট ঋণের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ২২৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করলেও ২০০৯ সালে টঙ্গীতে প্রাসাদোপম ভবন নির্মাণ শুরু করেন আবদুল্লাহেল বারী। ২০১৪ সালে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তিন পাশে নদীর সঙ্গে বাড়ির মূল পাইলিং ও বাউন্ডারি ওয়াল ছাড়া কোথাও ইটের ব্যবহার নেই। আব্দুল্লাহপুর-গাজীপুর বাইপাস সড়ক থেকে বাড়িতে প্রবেশের মূল দরজা ছাড়াও পেছন রয়েছে আরো একটি প্রবেশপথ। নদী থেকে সরাসরি বাড়িতে প্রবেশের সুযোগও রাখা হয়েছে। বাড়িটি নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানীয়রা জানায়, সম্পূর্ণ পাথরে নির্মিত বাড়িটির বিভিন্ন ধরনের উপকরণ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, মিসর ও সিঙ্গাপুর থেকে।