ভবদহের বিলে জোয়ারাধার চালু না থাকায় তলদেশে পলি জমে জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত

গত ছয় বছর ভবদহের কোনো বিলে জোয়ারাধার চালু না থাকায় মুক্তেশ্বরী-টেকা-হরি-শ্রী নদীর তলদেশে পলি জমে উঁচু হয়ে গেছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে এ এলাকার ২৭টি বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। গত বছর আগস্টেও বৃষ্টিতে দুই দফায় ভবদহের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যায়। ছয় মাস ধরে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ‘যশোরের দুঃখ’ ভবদহের বিস্তীর্ণ জনপদে মাসাধিককাল ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে এ অঞ্চলের মণিরামপুর, অভয়নগর ও কেশবপুরের হাজারো মানুষ। তাদের অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে সড়কের ওপর টংঘর তুলে বসবাস করছে।

এ বছরও জ্যৈষ্ঠ মাসের দুই দফা ভারি বর্ষণে পানি জমা হতে থাকে ভবদহ এলাকায়। পরে আষাঢ়ের বৃষ্টিতে কয়েক দিনের মধ্যেই ডুবে যায় এসব এলাকা। বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় যশোরের তিন উপজেলার শত শত পরিবার আশ্রয় নেয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উঁচু স্থান ও রাস্তার ওপর। বন্ধ হয়ে যায় শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম। আর এ অবস্থার মধ্যে নিরানন্দভাবে কেটেছে কোরবানির ঈদ। বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উত্সব দুর্গাপূজা নিয়েও নেই তেমন কোনো প্রস্তুতি।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, ‘গত বছরের জলাবদ্ধতার পর থেকেই আমরা কপালিয়ায় জোয়ারাধার (টিআরএম) বাস্তবায়ন করার কথা বলে আসছি। এক বছর চলে গেলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। টিআরএম বাস্তবায়ন হলে হাজার হাজার মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হতো না।’

উল্লেখ্য, কেশবপুরের জলাবদ্ধ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে কেশবপুর শহরের নয়টি ওয়ার্ডসহ উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রাম। ভেসে গেছে ২ হাজার ৩১৮টি মাছের ঘের এবং ৩ হাজার ২৫০টি পুকুরের মাছ। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩২ কোটি টাকা। এদিকে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের দুই পাশে মধ্যকুল ও হাবাসপোল এলাকার প্রায় ৪০০, আলতাপোলের ৭৫ ও বাজিতপুরের ৩০টি পরিবার টংঘর বেঁধে আশ্রয় নিয়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের কেশবপুর ডিগ্রি কলেজ, পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পাইলট বালিকা বিদ্যালয়, মধুশিক্ষা নিকেতন, মধ্যকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বালিয়াডাঙ্গাসহ ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সেখানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

Sharing is caring!

Related Articles

Back to top button