
ঘুরতে পারি একই দিনে পান্থমাই ঝরনা আর বিছানাকান্দি
সিলেটে ঘুরতে আসার প্ল্যান করছেন? তাইলে চলুন ঘুরে আসি প্রকৃতির স্বর্গ বিছানাকান্দি ও পান্থমাই। পর্যটন সম্প্রসারণের এ সময়ে আলোচিত নামগুলোর অন্যতম সিলেটের এ দুটি স্থান। সময় সংকুলানের জন্য একই দিনে একই রুটে দিনের দিন শেষ করতে হবে এ দুটি স্পট। কাছাকাছি নৌকা ভ্রমণের সুযোগে বিছানাকান্দি যাওয়ার আগে পান্থমাই ঝরনা দেখে আসাটা বেশ বুদ্ধিমানের কাজ। সব মিলিয়ে এ দুটি জায়গায় একদিনে ভ্রমণ করতে পারবেন সহজেই।
আম্বরখানা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তা অনেক সুন্দর। চারপাশে শুধু সবুজ চা বাগান। নীল আকাশ আর যেন সবুজ কার্পেটের উপর তাবু টানিয়েছে। বিমানবন্দর থেকে সালুটিকর রাস্তায় প্রবেশ করলেই রাস্তা চরম খারাপ। পিচ ঢালা কালো রাজপথে একটু পরপরই ভাঙ্গা গর্ত। মনে হয় একটু আগেই যেন এ পথে গডজিলা হেটে গিয়েছে, আসলে ভারী বালুর ট্রাকগুলো রাস্তার এ দশা করেছে। তবে বেড়াতে গেলে একটু কষ্টপ্তো সহ্য করতেই হবে, এই খারাপ রাস্তা পার হয়েই আপনি একদম গ্রামের ভেতর ঢুকে যাবেন। সিলেটের গ্রামগুলো যেমন সবুজ বৃষ্টিতে ধুয়ে রেখেছে। চিকন রাস্তাগুলো সাপের মতোই আঁকাবাঁকা হয়ে গ্রামের মাঝখানে।
এভাবেই একসময় পৌঁছে যাবেন হাদারপার, সেখানে বাজারেই বিছানাকান্দি যাওয়ার নৌকা পাওয়া যায়। হাদারপার থেকে নৌকাযোগে বিছানাকান্দি ও পান্থমাই একসঙ্গে ঘুরতে ভাড়া গুনতে হবে এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা। দুটি স্পটে একসঙ্গে গেলেই ভালো হয়। নৌকা ভাড়া ঠিক করার সময় আপনাকে একটু চালাকির পরিচয় দিতে হবে। তা না হলে অতিরিক্ত ভাড়া চেয়ে বসতে পারে। বিজিবির একটি অফিস আছে একদম শেষ মাথায়। বিছানাকান্দি নামার আগে অবশ্যই তাদের সাথে পরামর্শ ও অনুমতি নিয়ে নিবেন। বাংলাদেশের শেষ সীমানা। এতোবেশি ক্লান্ত ছিলাম, মাতৃভুমির মাটিতে বসে পরলাম। যারা হেটে বিছানাকান্দি যাবেন তারাই একমাত্র সুন্দর ঝরনাটি দেখতে পাবেন। মেঘালয় পাহারের বুক চিরে নেমে আসা ঝরনাটির নাম পাওয়া গেলনা।
পান্থমাইঃ বিছানাকান্দি যাওয়ার আগেই আপনি যাবেন পান্থমাই ঝর্রনায়। পান্থমাই ঝরনা ভারতে হলেও এর সৌন্দর্য পুরোটাই বাংলাদেশ থেকে দেখা যায়। ভারতীয়দের এ সৌন্দর্য দেখতে হলে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসতে হবে। ওখানে গেলে আপনার মনে হবে, যাক বাবা, পান্থমাই জলপ্রপাত তোমাকে ছুঁতে না পারলেও তোমার অসম্ভব সৌন্দর্য দেখে আমি অভিভূত। আমাদের দেশের ঝর্ণাগুলো মূলত ওপর থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হলেও এ ঝরনার বিশেষ বৈশিষ্ট্য এটা পাহাড়ি ঢল বেয়ে পাথরের মধ্য দিয়ে সজোরে প্রবাহিত হয়, যা আপনাকে এক উদ্দাম নৃত্য দেখাবে। বেশ গর্জন করতে থাকবে। আর টানতে থাকবে আপনার মন। কিন্তু একে ছুঁয়ে দেখার মতো সাধ্য আপনার নেই। তবে গড়িয়ে পড়া পানিতে গা ভিজিয়ে কিছুটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারেন। এখানেই সার্থকতা। সবুজে ঘেরা গ্রামের মধ্যে এ আমাদের এক অহংকার বলতেই পারেন। পান্থমাই গ্রামের চারপাশটা খুব চমৎকার প্রকৃতি দিয়ে ঘেরা। যেন সৌন্দর্যের আধার। রয়েছে বড় একটি খেলার মাঠ। বলা হয়ে থাকে, পান্থমাই বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর একটা। আপনার কাছেও গ্রামটা অসম্ভব সুন্দর লাগবে। মেঘালয় পাহাড়ের বুকে হেলান দিয়ে থাকা পান্থমাই গ্রাম বর্ষার রূপ আর সৌন্দর্যে অনন্যসাধারণ। এ ঝরনার পানি পুরোটাই প্রবাহিত হয় বাংলাদেশে। এর থেকে গড়িয়ে যাওয়া পানিতেই তৈরি হয়েছে ছোট নদী। স্থানীয়রা এটাকে ছড়া বলে থাকে। আর পান্থমাই জলপ্রপাত এ দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন বলেই এটাকে ফাটা ছড়া বা ঝরনা নামে চেনে।
বিছানাকান্দিঃ বিছানাকান্দিতে রয়েছে ছোট-বড় অগণিত পাথরের সমারোহ। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অজস্র পাথর, দেখে যেন মনে হয় পুরো এলাকাটাই পাথরের বিছানা। পিয়াইন নদীর অগণিত পাথরের মাঝে আপনাকে হাঁটতে হবে সাবধানে পা ফেলে। একটু অসাবধানতার ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। পানির গভীরতা কম হলেও পাথরের মাঝে আপনার ভ্রমণকে করবে আরো রোমাঞ্চিত। একটু পরপর বিজিবি সদস্যদের সতর্কবাণী আপনাকে এনে দেবে আরো থ্রিলার। জলপাথরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজের একটা ছবি হলেও ফ্রেমবন্দি করে রাখতে ব্যস্ত হবেন। ওপরে নীল আকাশ ঠিকরে পড়েছে জলে। জল হয়েছে নীলাভ। ডানে-বাঁয়ে সামনে মেঘালয়ের উঁচু পাহাড়। পাহাড়ে হেলান দিয়ে সাদা মেঘ। মাঝে ঝরনার বর্ষণধারা। দৃষ্টির শেষ সীমানা পর্যন্ত শুধু পাথর আর পাহাড়। এ দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলানো যে বড় কঠিন! দীর্ঘ সময় জলপাথরের বিছানায় শুয়ে-বসে গোসল করার পর একসময় বুঝতে পারবেন, এবার ফিরতে হবে। তখন কেবল মন খারাপের পালা। যখন ফিরে আসবেন, তখন পেছন থেকে সীমান্তের দিগন্ত ছোঁয়া মেঘালয় পাহাড় হাতছানি দিয়ে ডাকবে আর বলবে, আরো কিছুক্ষণ থেকে যাও। সময় পেলে ঘুরে আসতে পারেন এই পর্যটন স্পট থেকে। এখানকার নয়নাভিরাম প্রকৃতি আপনাকে নিরাশ করবে না ।
গাজা, মদ (রাম, ভোদকা, সেম্পেইন) সহ অনেক মাদক নেয়ার জন্য দালালরা এসে আপনাকে সাধতে পারে। সাবধান! ভুলেও এ ভুলটি করবেন না। একটু পরপর বিজিবি-বিএসএফ চেক হয় এখানে। ধরা পরলে জেল-জরিমানা সহ হয়রানির শিকার হতে পারেন। মেজাজ খারাপ হলে বিএসএফ কখন গুলি করে বসে ইয়াত্তা নাই।সবচে বড় কথা হলো মাদক থেকে দূরে থাকুন। প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকুন। এখানে থাকা-খাওয়ার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। সিলেটে থেকেই সময় করে যেতে হবে বিছানাকান্দি আর পান্থমাই। যাওয়া সময় সিলেট থেকে খাওয়া নিয়ে যেতে পারেন। ওখানে একটা বাজার থাকলেও দুপুরে খাওয়ার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। টুকটাক নাশতা সারতে পারেন। আর কোনোমতে পেট ভরাতে চাইলে স্থানীয়দের রান্না করা রেস্টুরেন্টগুলোতে ঢুঁ মারতে পারেন।