
জাল-সেলাই জীবিকা এদের
রাঙ্গাবালী উপজেলার খালগোরা স্লুইস ঘাটের গোটা উপকূলের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে ইলিশ শিকারের আয়োজন। সবাইতো আর নতুন জাল কিনতে পারে না, তারা গত বছরের ব্যবহৃত পুরোনও জাল সেলাই করে সাগরের বুকে ইলিশ শিকারের আয়োজন করে। আর এই সেলাইয়ে সহায়তা করে জীবিকা নির্বাহ করছে পটুয়াখালীর সাগর বেষ্টিত রাঙ্গাবালী উপজেলার একদল জেলে শ্রমিক।
প্রচন্ড রোদের তাপকে উপেক্ষা করে মৃদু-মৃদু দক্ষিণা বাতাসের তালে সবারই যেন একই কাজ জাল সেলাই করা। আবাল, বৃদ্ধা আর বনিতা সবাই যেন সমান তালে জাল সেলাইয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। এ উপজেলায় জেলেদের ছেড়া জাল সেলাই ও নতুন জালের দড়ি লাগানোর কাজ করে জীবিকা চলছে অন্তত দেড় হাজার পরিবারের। সাগরে কিংবা সাগর মোহনা সংলগ্ন এলাকায় যখন জেলেদের জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে তখন এদের মজুরি বাড়ে। আবার যখন সাগরে মাছ শিকার বন্ধ থাকে তখন মজুরি কমে যায়। এমনকি তখন ৩০০ টাকা থেকে মজুরি কমে মাত্র ১০০/১৫০ টাকায় নেমে আসে।
উপজেলার- খালগোড়া স্লুইস ঘাট, চরমোন্তাজ স্লুইসঘাট, কোড়ালিয়া লঞ্চঘাট, গঙ্গিপাড়া খেয়াঘাট, চর কাসেম খেয়াঘাট, চরগঙ্গা, টুঙ্গিপাড়া, মৌডুবী, চালিতাবুনিয়া, জাহাজ মারা এসব এলাকায় ছেড়া জাল সেলাই কিংবা নতুন জালের দড়ি লাগিয়ে এসব শ্রমিকদের জীবিকা চলছে। চরমোন্তাজ এলাকায় অনেক জেলে পরিবারের মহিলারাও এই কাজটি করেন। তবে পুরো বছর জুড়ে এই কাজটি এদের থাকে না। তখন আবার মাটি কাটা শ্রমিকসহ কামলার কাজ করতে হয়। একেকটি শাইন জালে দড়ি লাগাতে পাঁচজনের ৪/৫দিন পার হয়ে যায়। প্রায় এক হাজার হাত লম্বা একেকটি জাল।
সাগর থেকে একেকটি ট্রলার উপকূলে নোঙর করার সাথে সাথে তাদের ট্রলারের জালটি তুলে দেয় এদের হাতে। পুনঃ সাগরে যাত্রার আগেই জালের সকল ছিড়া অংশ এরা মেরামত করে দেয়। এ কারণে এখন তাদের দম ফেলার ফুরসত নেই। এ পেশায় জড়িত জসিম ব্যাপারী (৭৭), সামিম কাজী (৭৫) সহ একাধিক জেলে জানান, তারাও আগে সাগরে মাছ ধরতেন। কিন্তু এখন অনেকের বয়স হয়েছে, টাকার অভাবে সাগরে মাছের সাবার পরিচালা করতে না পারা, সরকারী ভাবে জেলদের জন্য কোন লোনদান পদ্ধতি না থকা, আবার সাগরে যে এখন চরম অশান্তি (ডাকাতি, ট্রলারডুবি) তাই শেষ বয়সে আর অপঘাতে মরতে চাইনা। তারা বাধ্য হয়েই সংসারের হাল ধরতে এ বিকল্প পেশা তাদের বেছে নিতে হচ্ছে। এতে আয় কম হলেও জীবনের তো নিরাপত্তা আছে।