
‘জিনজিরা শিল্প’ ও ‘ধোলাইখাল ব্র্যান্ড’ দেশের চাহিদা মিটাচ্ছে অনেকাংশেই
ক্ষুদ্র ও হালকা শিল্পে ব্যতিক্রমী সাফল্যের মাধ্যমে কয়েক যুগ ধরেই দৃষ্টান্ত হয়ে আছে জিনজিরা। একটা সময় ছিল, যখন কোনো পণ্য নকল হলে বা গুণগতমান খারাপ হলে মেড ইন জিনজিরা বলে আখ্যা দেয়া হতো। বর্তমানে বাংলার চীন, বাংলার জাপান বা মেড ইন জিনজিরা ইত্যাদি নামে পরিচিত কেরানীগঞ্জ উপজেলার জিনজিরা ইউনিয়ন।
এখানকার ঝুপড়ি বস্তির অজস্র কারখানায় খুদে ইঞ্জিনিয়ারদের তৈরি করা হাজারো পণ্যের কদর রয়েছে সর্বত্র। দেশ-বিদেশে ‘মেড ইন জিনজিরা’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতিও আছে এসব পণ্যের। রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর তীরঘেঁষা জিনিজরা-শুভাঢ্যা থেকে শুরু করে কেরানীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়েই জিনজিরা শিল্পের অভাবনীয় বিস্তার। জিনজিরার মূল অংশটি তাওয়াপট্টি নামে পরিচিত। বুড়িগঙ্গা তীরঘেঁষে এর অবস্থান। তাওয়াপট্টিতে গড়ে ওঠা টিনের ঘরের ছোট ছোট কারখানায় তৈরি হয় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। এখানকার কারিগররা এতটাই দক্ষ যে, তারা কোনো যন্ত্রাংশের নমুনা দিলে হুবহু তা বানিয়ে দিতে পারেন। সেগুলো টেকসই ও মানসম্মত। আর এসব যন্ত্রপাতি তৈরিতে যেসব যন্ত্র বা মেশিন দরকার হয় তা নিজেরাই বানিয়ে নেন। তাই এটাকে নকল বলা চলে না, এটা হচ্ছে অনুকরণ। এখানকার তৈরি যন্ত্রাংশের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। অনর্গল ইঞ্জিনের ঢস ঢস, ঘট ঘট শব্দ, কারিগরের সদা ব্যস্ত হাঁকাহাঁকি, শ্রমিকদের কোলাহল-আওয়াজ ঘুচিয়ে দিয়েছে সেখানকার রাত-দিনের ব্যবধান।
গত দুই দশকে ‘জিনজিরা শিল্প’ অগ্রসর হয়েছে অনেক দূর। এখন আর তা জিনজিরা-কেরানীগঞ্জে সীমাবদ্ধ নেই, সম্প্রসারিত হয়েছে রাজধানীর আনাচে-কানাচে, দেশজুড়ে। জিনজিরার পাশাপাশি ইঞ্জিন-যন্ত্রাংশ, গাড়ির ক্ষুদ্র পার্টসসহ প্রায় ২০০ ধরনের মেশিনারিজ উৎপাদন ও বাজারজাতের বিশাল সম্ভাবনার খাত হয়ে উঠেছে ‘ধোলাইখাল ব্র্যান্ড’। ধালাইখাল ব্র্যান্ডের কারিগররা বাইসাইকেল থেকে শুরু করে সব ধরনের গাড়ি, ট্রাক্টর, ক্রেন, রি-রোলিং মিল, এমনকি ট্রেনের বগিসহ যাবতীয় যন্ত্রাংশ অনায়াসে প্রস্তুত করছেন। এ ছাড়াও রাজধানীর মীরহাজিরবাগ, মাতুয়াইল, ডেমরা, চকবাজার, লালবাগ, ইসলামবাগ ও মিরপুরের বিভিন্ন স্থানে জিনজিরা শিল্পের আদলে অসংখ্য ক্ষুদ্র কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। শুধু ঢাকায় নয়, জিনজিরা মডেল অনুসরণ করে নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, চট্টগ্রাম, যশোরের নওয়াপাড়া, টঙ্গী-গাজীপুর, পাবনা, নাটোর ও রাজশাহী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পইউনিট। শুধু চোখের দেখায় তৈরি করছেন চীনা-জাপানি মডেলের নানা ধরনের যন্ত্রাংশ। এছাড়া সারা দেশেই আড়ালে-আবডালে ঘটে চলেছে এক অভাবনীয় বিপ্লব। দেশীয় প্রযুক্তির ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ উদ্ভাবন, উৎপাদন ও বাজারজাতে বদলে গেছে দৃশ্যপট। এই ক’দিন আগেও অতি প্রয়োজনীয় যেসব যন্ত্রপাতি ও মেশিনারিজ শতভাগ আমদানিনির্ভর ছিল, আজ দেশের চাহিদা মিটিয়ে সেগুলো রীতিমতো রফতানি করা হচ্ছে।